বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন

রেকর্ড গড়েও জয় পেল না বাংলাদেশ

রিপোর্টারের নাম / ১৬৬ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেল না বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের করা ৩৮১ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ৩৩৩ রানে।

যা কি-না ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এবং বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তবু ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধান ৪৮ রানের। এ পরাজয়ের ফলে সেমিফাইনালে খেলার আশা প্রায় শেষই হয়ে গেল বলা চলে।

বিশ্বকাপে আজকের ম্যাচের আগে তিনবার ৩০০’র বেশি রান করেছিল বাংলাদেশ, জয় এসেছিল প্রতিবার। কিন্তু আজকের ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করেও জয়ের বন্দরে পৌঁছানো হলো না মাশরাফি-সাকিবদের।

অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৮১ রানের বিশাল সংগ্রহের জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে ৩৩৩ রান। মুশফিকুর রহীমের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি ও তামিম-মাহমুদউল্লাহর ফিফটির পরও পরাজয়ের ব্যবধানটা তাই ৪৮ রানের।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই বাংলাদেশ শিবিরে আসে বড় ধাক্কা। দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন সৌম্য সরকার।

প্যাট কামিন্সের বলটি মিডঅনে ঠেলে দিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল, মাঝে ভুল বোঝাবুঝিতে ফেরত আসেন স্ট্রাইকিং এন্ডে। কিন্তু ননস্ট্রাইক এন্ডে সৌম্য ফিরতে পারেননি, অ্যারন ফিঞ্চের সরাসরি থ্রোতে ভেঙে যায় স্ট্যাম্প। ৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে সৌম্য সাজঘরের পথ ধরেন ব্যক্তিগত ১০ রানেই।

দ্বিতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বিশ্বকাপে টানা পঞ্চম ফিফটির। কিন্তু দলীয় ১০২ রানের মাথায় তিনি আউট হন ব্যক্তিগত ৪১ রানে।

এর আগে অবশ্য প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৪০০’র বেশি রান করার কৃতিত্ব দেখান বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। পাঁচ ইনিংসে ১০৬.২৫ গড়ে এখনও পর্যন্ত তার সংগ্রহ ৪২৫ রান।

সাকিবের বিদায়ের পর তামিম তুলে নেন চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি। মুশফিকের সঙ্গে তার জুটিতে দলীয় সংগ্রহটাও এগুচ্ছিলো বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। কিন্তু সুখ যেনো বেশিক্ষণ সয়নি তামিমের।

মিচেল স্টার্কের করা ২৫তম ওভারের প্রথম বলটি ছিলো অফস্টাম্পের বেশ বাইরে। থার্ডম্যান দিয়ে গলাতে গিয়ে উল্টো স্ট্যাম্পে টেনে নেন তামিম। থেমে যায় তার ৭৪ বলে খেলা ৬২ রানের ইনিংসটি।

আগের ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উইকেটে আসেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু প্রথম বলেই তাকে মরণঘাতী এক বাউন্সার দেন স্টার্ক। যা আঘাত হানে সোজা হেলমেটে। বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। প্রাথমিক সেবা নিয়ে খেলা শুরু করেন লিটন।

তখন আর মনেই হয়নি প্রথম বলেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। দারুণ ৩টি চারের মারে ১৬ বলে করে ফেলেন ২০ রান। কিন্তু আউট হয়ে যান লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ নেন লিটন।

রিপ্লেতে দেখা যায় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত না দিলে বেঁচে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু ‘আম্পায়ার্স কল’ আউট থাকায় ত্রিশতম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ১৭৫ রানের মাথায় সাজঘরেই ফিরে যেতে হয় লিটনকে। এরপরই জুটি বাঁধেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।

ত্রিশতম ওভারে লিটন কুমার দাস আউট হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই দেখছিলেন টাইগারদের বড় পরাজয়। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়ে এখনও জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন দুই ভায়রা ভাই মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

দুজনই রান করছেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। জুটিতেও পূরণ হয়েছে শতরান। তবে এখনও পাড়ি দিতে হবে অনেক লম্বা পথ। কারণ জয়ের জন্য লক্ষ্যটা যে আকাশছোঁয়া। যা তাড়ায় টাইগার ভক্তদের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর জুটি।

ওভারপ্রতি প্রায় ১৫ রানের চাহিদায়, প্রতি ওভারেই একটি-দুইটি করে বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছিলেন দুজনে। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের যথাযথ জবাব দিয়ে দুজন মিলে গড়ে ফেলেন শতরানের জুটি, যেখানে ফিফটি হয়ে যায় দুই ব্যাটসম্যানেরই।

লক্ষ্যটা বিশাল হওয়ায় আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পরেও শেষের পাঁচ ওভারে বাকি থাকে ৮২ রান। সে ওভার করতে এসেই মূলত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন নাথান কোল্টার নিল।

তার করা ৪৬ ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আউট হওয়ার আগে ৫ চার ও ৩ ছক্কার মারে ৫০ বলে ৬৯ রান করেন তিনি। পরের বলেই সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন সাব্বির রহমান।

এরপর আর একার পক্ষে বেশিকিছু করা সম্ভব ছিল না মুশফিকের পক্ষে। তবু তিনি দলীয় সংগ্রহটাকে নিয়ে যান ৩৩৩ রান পর্যন্ত, তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে তিন অঙ্কের দেখা পেলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ মাইলফলকে পৌঁছলেন তিনি।

তার আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২০১৫) এবং সাকিব আল হাসান (২০১৯)। আগের দুইজনই করেছেন ২টি করে সেঞ্চুরি, তাও পরপর দুই ম্যাচে।

মুশফিকও তা পারবেন কিনা তা জানা যাবে পরের ম্যাচেই। তবে আজকের সেঞ্চুরিটি করতে মুশফিক বল খেলেছেন ৯৫টি। ৯ চার ও ১ ছয়ের মারে সাজিয়েছেন নিজের সেঞ্চুরি।

শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রানে। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৯৭ বলে ১০২ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২টি উইকেট নেন নাথান কোল্টার নিল, মিচেল স্টার্ক ও মার্কস স্টয়নিস।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দুই ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ আর ডেভিড ওয়ার্নার বাংলাদেশি বোলারদের দেখেশুনে খেলছিলেন। সেঞ্চুরি জুটিও গড়েন তারা।

কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ফ্রন্টলাইন বোলাররা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংকে বিপদে ফেলতে পারছিলেন না। অবস্থা বেগতিক দেখে ২১তম ওভারে পার্টটাইমার সৌম্য সরকারের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

অধিনায়কের এমন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত কাজে লেগে যায় সঙ্গে সঙ্গে। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে এসে অ্যারন ফিঞ্চকে শর্ট থার্ড ম্যানে রুবেল হোসেনের ক্যাচ বানান সৌম্য। ফিঞ্চ ৫১ বলে করেন ৫৩ রান। ১২১ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙায় স্বস্তি ফিরে বাংলাদেশ শিবিরে।

তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সে স্বস্তিকে আবারও অস্বস্তিতে রূপ দেন ওয়ার্নার আর উসমান খাজা। এর মধ্যে ওয়ার্নার এবারের বিশ্বকাপে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নেন। সেটা দেড়শোতে নিয়েও থামেননি।

১৯২ রানের বিশাল এই জুটিটি শেষপর্যন্ত ভাঙেন ওই সৌম্য সরকারই। যেন ফিঞ্চের আউটের পুণরাবৃত্তি। শর্ট থার্ড ম্যানে রুবেলই নিয়েছেন ক্যাচ। ১৪৭ বলে ১৪ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় ওয়ার্নারের উইলো থেকে আসে ১৬৬ রান।

এরপর উইকেটে এসে ছোটখাটো এক ঝড় তুলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৪৭তম ওভারে এসে আবারও চমক দেখান সৌম্য। ১০ বলে ২ চার আর ৩ ছক্কায় ৩২ রান করা ম্যাক্সওয়েল শর্ট ফাইন লেগে বল ঠেলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। রুবেল হোসেন সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন।

ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে উসমান খাজাকে মুশফিকুর রহীমের ক্যাচ বানান সৌম্য। ৭২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৮৯ রানে সাজঘরের পথ ধরেন খাজা, সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে।

পরের ওভারের প্রথম বলে স্টিভেন স্মিথকে মাত্র ১ রানেই এলবিডব্লিউ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। শেষদিকে মার্কাস স্টয়নিসের ১৭ আর অ্যালেক্স কারের ১১ রানে ৩৮১তে থামে অস্ট্রেলিয়া।

বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল পার্টটাইমার সৌম্য সরকারই। ৮ ওভারে ৫৮ রান খরচায় তিনি নেন ৩টি উইকেট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর