শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

প্রসঙ্গ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়ন ।

রিপোর্টারের নাম / ২৪৮ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে ।বর্তমানে সবদিক থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছে।

বিশ্বাস ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে তাই প্রতিবেশীর স্বার্থের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়াটাই ভারতের নীতি। আর ওই একই কারণে ভারত তার নিকটতম প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখে থাকে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশের কিছু কিছু মহল ভারতের এই সৎ প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিটিকে সর্বদাই আড়চোখে দেখে থাকে। তারা ধরেই নিয়েছে যে, বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারই ভারতের একমাত্র অভিপ্রায়। কিন্তু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, ভূখণ্ডেও অর্থনীতিগত ব্যাপারসমূহ, সামরিক বিষয়াদি এবং বাইরের কোনো কোনো শক্তির প্ররোচনাই মূলত তাদের এ ধরনের মনোভঙ্গির জন্য দায়ী।

এক্ষেত্রে ওই মহলসমূহের মধ্যে বিদ্যমান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর বিষয়াদির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেগুলোর ব্যাপারে ভারতের ভ‚মিকা খানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দাবি রাখে বৈকি! আমরা সবাই জানি যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের বুনিয়াদটি রচিত হয়েছিল ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেন্দ্র করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা জোগাতেও ভারত কার্পণ্য করেনি সেদিন। বিগত চার দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বহু চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে (১৯৭২-৭৫) দেশ দুটির মধ্যকার সৌহার্দ ও সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক এক ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চতায় পৌঁছেছিল। আবার সামরিক একনায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনকালে (১৯৭৫-৮১) ভারতের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাসের পাল্লাই ছিল ভারী! এর মধ্যেও ভারত বরাবরই বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কই কামনা করে এসেছে। আবার অপর স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের আমলে (১৯৮২-৯০) ও খালেদা জিয়ার দুই মেয়াদের শাসনকালে (১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-০৬) ভারত উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। এদের আমলেও উভয় দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক ও সফর অব্যাহত ছিল। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতারোহণের পর (১৯৯৬-০১ এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি) দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্থবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও গুণগত পরিবর্তন সাধিত হতে দেখা যায়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে এ পর্যন্ত উভয় দেশে যে বা যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন দেশ দুটির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিন্তু পিছিয়ে থাকেনি। যেমনÑ ১৯৭৭ সালে তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ে ৫ বছর মেয়াদি চুক্তি। আর এই চুক্তি ভারতের দিক থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতাকেই মেলে ধরে বৈকি। ১৯৯২ সালে বিএনপি আমলে তিনবিঘা করিডোরটির লিজ বিষয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তিটিও এ ক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে নিশ্চয়ই। আবার ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানিবণ্টন সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের নৌ-সীমানা নির্ধারণী রায়টি ভারত তার সহযোগিতা ও সৌহার্দসূচক নীতিভঙ্গির কারণেই অকপটে মেনে নেয়। ওই রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশের অনুক‚লে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ছেড়ে দেয়। ২০১৫ সালে সম্পাদিত সীমানা চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সেই প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে ইতিহাস-ভাষা-সংস্কৃতি-নদী ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভিন্নতা বা সাদৃশ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশের দিক থেকে প্রায়ই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতির যে অভিযোগটি শোনা যায় সেটির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভারত একতরফাভাবেই বাংলাদেশের সব পণ্যের (শুধু ২৫ ধরনের মাদকদ্রব্য ছাড়া) ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এতে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করা যায়। এই সুবিধা প্রদান করায় ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে গত বছরে তা ১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে যে ভারত বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে তার আর একটি উদাহরণ হচ্ছে কোনো প্রকার চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ না করা। আর এই একই কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তির মেয়াদ ১৯৯৭ সালে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের অনাগ্রহের কারণে ভারত তা নবায়নের জন্য কোনো প্রকার উৎসাহই আর দেখায়নি। মোদ্দাকথা এই দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের পরিধি ও মাত্রা এখন এমনই এক তাৎপর্যপূর্ণ রূপ পেয়েছে যে লাভ-ক্ষতির হিসাবটিকে এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনায় না এনে সম্পর্ক যাতে নিবিড় ও অটুট থাকে সেটিকেই অধিক প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আর তাই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারত সর্বাগ্রে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং এই ভয়াবহ কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাঝেও ভারত বাংলাদেশকে পিপিই, টেস্ট কিট ও ওষুধপত্র সরবরাহ করতে ভোলেনি।’২০১৪ সাল থেকে দুই দেশের সম্পর্কের খুব উন্নয়ন ঘটেছে। এই সময় থেকে দুই দেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে, সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে, কানেক্টিভিটি চুক্তি সই হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ১ হাজার ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ভারত।’
অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি সাধনের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার অটুট বন্ধন এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এতদাঞ্চলে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত মজবুত অর্থনৈতিক শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে আর সেক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের মধ্যে এ জাতীয় বন্ধন যে এক অপরিহার্য বিষয় এতে কোনো সন্দেহের অবকাশই নেই।

সুমন হালদার
সম্পাদক ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর