সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

বরিশালে সাড়ে ৩ মাসেও উদ্ঘাটন হয়নি ডা. আজাদের মৃত্যুর রহস্য

রিপোর্টারের নাম / ১৯৫ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. এম এ আজাদের (৪৭) মৃত্যুর রহস্য সাড়ে তিন মাসেও উদ্ঘাটন হয়নি। ফলে মামলার ভবিষ্যৎ ও বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

 

 

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এম এ আজাদের মরদেহ গত ২৮ এপ্রিল নগরীর কালীবাড়ি রোডে বেসরকারি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়।

 

মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের মালিক ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জহিরুল হক মানিক বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে প্রচার করে আসছেন। মরদেহ উদ্ধারের পর তার কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল।

 

ডা. জহুরুল হক মানিক বরিশালের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার সঙ্গে বরিশালের বড় বড় রাজনৈতিক নেতার সখ্য রয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তিনি পুলিশের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন। হত্যার ঘটনাটি দুর্ঘটনা বানানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ এ খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে আন্তরিক নয়।

 

 

ডা. এম এ আজাদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সাড়ে তিন মাস পার হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। এম এ আজাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনের দায়িত্ব পুলিশের।

 

 

গত ২৮ এপ্রিল নগরীর কালীবাড়ি রোডে বেসরকারি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচু একটি জায়গা থেকে ডা. এম এ আজাদের মরদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

 

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার উচ্ছ্বাস অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুলকে।

 

 

নিহত ডা. এম এ আজাদের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সোহাগদল গ্রামে। তিনি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের সাততলার একটি ইউনিটে থাকতেন। তার স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকেন।

 

 

ডা. এম এ আজাদের স্বজন ও কয়েকজন সহকর্মী জানান, আজাদ চাকরির সুবাদে বরিশালে থাকতেন। চিকিৎসক হিসেবে তার সুনাম ছিল। ভদ্র ও সদালাপী একজন মানুষ ছিলেন।

 

কারও সঙ্গে উঁচু গলায় তিনি কথা বলতেন না। গত ২৮ এপ্রিল আজাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন রমজান মাস ছিল। এর আগের দিন ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন আজাদ। ইফতারের আগ মুহূর্তে আজাদের স্ত্রী ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু আজাদ তার (স্ত্রী) ফোন ধরেননি।

 

 

ইফতারের আগে ক্লিনিকের এক কর্মচারী ইফতার নিয়ে ডা. আজাদের কক্ষে গিয়ে সেটি তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে কক্ষের সামনেই ইফতারের প্যাকেট রেখে আসেন।

 

এরপর রাত ৯টার দিকে রাতের খাবার দিতে এসে একই অবস্থা দেখেন। পরে রাতের খাবারও দরজার সামনে রেখে যান। সেহরির সময় ডা. আজাদের স্ত্রী মুঠোফোনে আবার কল দেন। তখনও ফোনে তাকে পাচ্ছিলেন না। পরে তার স্ত্রী বিষয়টি হাসপাতালের মালিক ডা. জহুরুল হক মানিককে ফোন করে জানান।

 

ডা. মানিক সকাল ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের সাততলায় গিয়ে দেখেন ডা. আজাদের কক্ষটি তালাবদ্ধ। এরপর তিনি বরিশালের কোতোয়ালি থানায় ফোন করেন।

 

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ গিয়ে কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন মুঠোফোন বিছানার ওপর রাখা। বাইরে পরার জামা-কাপড় সবই কক্ষের ভেতরে আছে।

 

পরে পুলিশ পুরো হাসপাতাল তল্লাশি করে। একপর্যায়ে নিচ তলায় লিফটের নিচে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে ২৭ এপ্রিল বিকেলের পর তিনি আর কক্ষে যাননি। বিকেল থেকে রাতের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ লিফটের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচু একটি জায়গায় ফেলে রাখা হয়।

 

 

এদিকে ২৮ এপ্রিল বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

 

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লিফটম্যান, ওই হাসপাতালের শিফট ইনচার্জ এবং ওটি বয়সহ ৯ স্টাফকে থানায় নিয়ে যান। পরিদর্শন শেষে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, লিফট থেকে পড়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটার কথা নয়। এটি স্বাভাবিক কোনো দুর্ঘটনা বলেও মনে হচ্ছে না।

 

এছাড়া মরদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন আলামত দেখে তাদের কাছে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হয়নি।

 

 

মামলার বাদী ও নিহতের ছোট ভাই চিকিৎসক শাহরিয়ার উচ্ছ্বাস অভিযোগ করেন, মামলা করার পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। তবে কয়েক দিন পর তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। ময়নাতদন্তসহ হত্যার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও পুলিশ পায়নি।

 

 

মামলার বাদী ডা. শাহরিয়ার উচ্ছ্বাস বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ডা. এম এ আজাদের মৃত্যুর কারণ ‘দুর্ঘটনা’ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে সাততলার লিফটের ফাঁকা অংশ দিয়ে নিচে পড়ে আজাদের মৃত্যু হয়েছে।

 

 

তিনি বলেন, লিফটটি সচল ছিল। ডা. আজাদ কীভাবে সচল লিফটের নিচে পড়ে গেলেন। এখন এটা বড় প্রশ্ন। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত ওই রিপোর্টটি দেখা হয়নি।

 

 

ডা. শাহরিয়ার উচ্ছ্বাস বলেন, প্রথমত উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গেলে সাধারণত মাথায় আঘাত লাগে। কিন্তু আজাদের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

 

দ্বিতীয়ত মৃত্যুর পরপরই পুলিশ যে ছবি তুলেছিল তাতে স্পষ্ট দেখা গেছে আজাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। এ আঘাতের চিহ্ন কোথা থেকে এলো।

 

উঁচু জায়গা থেকে পড়লে এ ধরনের ছোট ছোট আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা নয়। তৃতীয়ত লিফটের ফাকা অংশ দিয়ে সাততলা থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলা হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ লিফটি সচল ছিল। লিফট নির্দিষ্ট তলায় না আসলে দরজা খোলা যায় না। সেভাবেই লিফট কাজ করে।

 

তিনি আরও বলেন, মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালে থাকতেন ডা. আজাদ। হয়তো সেখানকার বা কোনো ব্যক্তির এমন কিছু বিষয় টের পেয়েছিলেন যা প্রকাশ পেলে তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হতো। সে কারণেই ডা. আজাদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

 

মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের মালিক ডা. জহিরুল হক মানিক। তিনি বরিশালের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। তার সঙ্গে বরিশালের বড় বড় রাজনৈতিক নেতার সখ্য রয়েছে।

 

রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তিনি পুলিশের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন। হত্যার ঘটনাটি দুর্ঘটনা বানানোর চেষ্টা করছেন। প্রথম থেকেই বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে প্রচার করে আসছেন জহিরুল হক মানিক। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।

 

ডা. শাহরিয়ার উচ্ছ্বাস বলেন, আমরা হত্যা মামলার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে হত্যা মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের কিছু হলে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

 

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের মালিক ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জহিরুল হক মানিকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভি করেননি।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, আমরা তথ্যের ভিত্তিতে এগোচ্ছি। চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছি না।

 

এ মামলাটি ক্লুলেস। তাই একটু সময় লাগছে। তবে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। ঢাকায় পাঠানো আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি।

 

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তারা প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এ সপ্তাহে হাতে পেয়ে যাব বলে আশা করছি। পেলে মৃত্যুর মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হবে। পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পরে বোঝা যাবে এটি হত্যা না দুর্ঘটনায় মৃত্যু।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর