বরিশালে স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি
৭১’র রণাঙ্গনে স্বামী-সন্তান দু’জনই শহীদ হলেও স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রণাঙ্গনে পাক হানাদার বাহীনির হাতে শহীদ হন মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভাধীন কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল হক হাওলাদার ও তার ১৪ বছরের ছেলে মানিক।
রণাঙ্গনে পিতা-পুত্রের শহীদ হওয়ার ঘটনায় তৎকালীন সময়ে ১৯৭২ সালের ১২ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রেরণ করে শহীদ পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং প্রধনমন্ত্রীর ত্রান কল্যাণ তহবিল থেকে বরিশাল মহকুমা প্রশাসনের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এরপর আর কেউ তাদের কোন খোঁজ নেননি।
ফলে দীর্ঘ ৪৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত শহীদ পরিবার হিসাবে কোন স্বীকৃতি মেলেনি হতভাগ্য পরিবারের। প্রতি বছর বিজয়ের মাসে দেশের সুর্য সন্তানদের সম্মাননা দিলেও ঘরে বসে মুখ থুবরে কাদেঁন ওই পরিবারের সদস্য বৃদ্ধা ফিরোজা খাতুন।
এ বিষয়ে ফিরোজা খাতুনের সাথে আলাপকালে তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর বসত ঘরটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত মেরামত না করায় জীর্ণসীর্ন অবস্থায় পরে আছে। ৭১’র রণাঙ্গনে স্বামী সন্তান হারিয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন ৯০ বছরের বৃদ্ধ ফিরোজা খাতুন।
রোগে শোকে কাতর বৃদ্ধা ফিরোজা খাতুন অশ্র“সিক্ত নয়নে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বামী সন্তান হারিয়ে শিশু পুত্র কালুকে নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও কোন ফল হয়নি। বর্তমানে বয়সের ভারে চোখেও দেখিনা।
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিনা বলেই হাউমাউ করে কাদঁতে থাকেন। ফিরোজা খাতুনের সেই দিনের কোলে থাকা শিশুপুত্র কালু এখন ভাড়ায় চালিত অটো রিক্সা চালক।
আর এই আয়-রোজগারেই কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করে মানবেতর ভাবে জীবন-যাপন করছে শহীদ পরিবারটি। এসময় বৃদ্ধা ফিরোজ খাতুন নিজের অসুস্থ্যতা ও দুঃখ-দুদর্শার কথা তুলে ধরে সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়ে বলেন, মৃত্যুর আগে অনন্ত দেখে যেতে চান তাদেরকে যেন শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।