বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন

পাকিস্তানকে হারিয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় বাংলাদেশের

রিপোর্টারের নাম / ৫৪ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এবার রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের গর্জন! চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ড্রাইভিং সিটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে মুলতানের সেই স্মৃতি তাড়া করেছে অনেকটা সময় ধরে। অন্তত মোহাম্মদ রিজওয়ান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত খানিকটা প্রতিরোধ গড়লেও মুলতানের ইনজামাম হতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ফলে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৩ টেস্টের মধ্যে ১২ বারই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেরা সাফল্য ছিল ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় অবশেষে ধরা দিয়েছে। সেটাও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে, ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।

টেস্টে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ১০ উইকেটে জয়। পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।

রাওয়ালপিন্ডিতে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ, লিড পায় ১১৭ রানের। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে এক উইকেটে ২৩ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল পাকিস্তান। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন হাসান মাহমুদ। শান মাসুদের ব‍্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়েছিল লিটন দাসের গ্লাভসে। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।

মাসুদের ক্যাচ নেওয়া লিটন পরের ওভারেই শরীফুলের বলে বাবর আজমের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শূন্য রানে ফিরতে পারতেন পাকিস্তান অধিনায়ক। লিটনের হাতে জীবন পাওয়ার পরও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাবর। নাহিদ রানার বলে বোল্ড হয়েছেন। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। ইনসাইড এজে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ৫০ বলে ২২ রান করেন বাবর।

বাবর আজমকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের জুটি ভাঙার পরের ওভারেই শূন‍্য রানে সৌউদ শাকিলকে ফেরান সাকিব। পাকিস্তানের পরের উইকেটটাও পকেটে পুড়েছেন সাকিব। তেড়েফুঁড়ে বড় শট খেলতে গিয়ে নিজেকে বিসর্জন দেন আব্দুল্লাহ শফিক। এই উইকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক বনে গেছেন সাকিব।

সাকিবের পরপর ২ উইকেটে এমনিতেই ব্যাকফুটে ছিল পাকিস্তান। স্বাগতিকদের আরও বিপদে ফেলেন মিরাজ। লাঞ্চব্রেকের ঠিক আগে পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন তিনি। তার বলে আগা সালমানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল দারুণ ভাবে লুফে নিয়েছেন প্রথম স্লিপে থাকা সাদমান ইসলাম।

বিরতি থেকে ফিরেও পাকিস্তান শিবিরে মিরাজের আঘাত। মিরাজের করা খানিকটা লো হওয়া বল ঠিকঠাক ব্যাটে লাগাতে পারেননি শাহিন আফ্রিদি। বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন আফ্রিদি। মিরাজের পর আবারও উইকেটের উৎসব সাকিবের। হাওয়ায় ভাসানো বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মুশফিকের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন নাসিম শাহ।

শেষের দুই উইকেট একাই শিকার করেছেন মিরাজ। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড করার পর ও মোহাম্মদ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই অফ স্পিনার। সাকিব ও মিরাজ দুই স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।

পাকিস্তান ২৯ রানের লিড পেলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাড়ায় ৩০ রানের। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ ওভার ৩ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। জাকির হাসান অপরাজিত ছিলেন ১৫ রান করে। আরেক ওপেনার সাদমান অপরাজিত ৯ রান করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর