শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

পিরোজপুরে আদালতে ভুয়া নিয়োগে দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, মামলা

রিপোর্টারের নাম / ২১৮ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩

পিরোজপুর জেলা জজ আদালতে কয়েকটি শূন্য পদে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে তাতে নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। আর ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ৪ নিয়োগপ্রত্যাশির কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এজন্য তাদের ভুয়া প্রবেশপত্র, লিখিত পরীক্ষার খাতা, প্রশ্নপত্র ও নিয়োগ পত্র তৈরি করে চাকরিপ্রার্থীদের সরবরাহ করা হয়। পরে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পরিচয়ে চাকরিপ্রার্থীদের ফোন দেন। পরে চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে তারা প্রতারিত হয়েছেন বলে জানতে পারেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব মুন্সিখানা শাখার অফিস সহায়ক রিয়াজুল ইসলাম ও জেলা জজ আদালতের চাকরিচ্যুত অফিস সহায়ক ফোরকান হোসেন ওই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছেন টাকা লেন দেনের মধ্যস্থতাকারী রথীন্দ্রনাথ রায় নামের এক ব্যক্তি।

বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশের ছয় মাস পার হলেও পুলিশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেননি।

এছাড়া রথীন্দ্রনাথ রায়ের করা চেক জালিয়াতির মামলায় আসামি ফোরকান হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তাকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এতে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ও মামলার বিচার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

টাকার মধ্যস্থতাকারী রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি করার সময়ে রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে রিয়াজুল ইসলাম ওই ফোরকান হোসেনকে নিয়ে আমাকে বলেন, জেলা জজ আদালতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আপনার পরিচিত কেউ থাকলে যোগাযোগ করেন। এরপর আমার চারজন আত্মীয়ের চাকরির জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এজন্য তাদের ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি উনারা প্রতারণা করেছেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য মামলা করেছি। কিন্তু আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা বলছেন এ মামলায় তাদের কিছুই হবে না। আসামি রিয়াজুল ইসলামের পক্ষে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি মামলায় তদবির করছেন। এ কারণে মামলার তদন্ত ভার পাওয়ার ছয় মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত কর্মকর্তা পিরোজপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিচুর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করছেন না।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে রথীন্দ্র নাথ রায়কে রিয়াজুল ইসলাম ও ফোরকান হোসেন জানান পিরোজপুর জেলা জজের কার্যালয়ে কিছু শূন্য পদে লোক নিয়োগ হবে। তারা রথীন্দ্র নাথ রায়কে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল তারিখের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখান। এরপর রথীন্দ্র নাথ রায় চারজন আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে রিয়াজুল ইসলাম ও ফোরকান হোসেনকে দেন। ওই বছরের ২৫ মে নিয়োগপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশের উপপরিদর্শক পরিচয়ে সোহেল নামে একজন চাকরিপ্রার্থীদের ফোন করেন। এরপর রিয়াজুল ও ফোরকান আদালতের সিল, জেলা ও দায়রা জজের স্বাক্ষর জাল করে চারজন চাকরিপ্রার্থীকে গত ১৯ জুন পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ভুয়া প্রবেশপত্র দেন। তারা লিখিত পরীক্ষার খাতা, প্রশ্নপত্র দিয়ে বলেন পরীক্ষা দিতে হবে না। আমরা সব ব্যবস্থা করব। এরপর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি তালিকা করে ২ জুলাই মৌখিক পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরে ৩১ জুলাই জেলা জজের সিলসহ স্বাক্ষরিত ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে চার জনকে ২২ আগস্ট যোগদান করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। ওই তারিখে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বরগুনার পাথারঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী গ্রামের শিপু ঘরামী, বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের অমিত মালাকার, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের শন্তু মণ্ডল ও একই গ্রামের নয়ন কিশোর রায় যোগদান করতে গিয়ে জানতে পারেন চাকরি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও তাদের নিয়োগপত্র ভুয়া। এরপর ওই চারজন চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মধ্যস্থতাকারী রথীন্দ্র নাথ রায়ের কাছে টাকা ফেরত চান। রথীন্দ্র নাথ রায় রিয়াজুল ইসলাম ও ফোরকান হোসেনকে বিষয়টি জানিয়ে ফোন করলে তারা ফোন কেটে দেন। ২৯ আগস্ট রথীন্দ্র নাথ রায় পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে এসব প্রতারণার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

এরপর রথীন্দ্র নাথ রায়সহ

চাকরির জন্য টাকা দেওয়া ব্যক্তিরা ফোরকান হোসেনের সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরত চাইলে ৩০ আগস্ট রথীন্দ্র নাথ রায়কে ৭০ লাখ টাকার একটি চেক দেন ফোরকান। চেকটি পিরোজপুরের অগ্রণী ব্যাংকের শাখায় জমা দিলে ডিজঅনার হয়। এ ঘটনায় ১৭ অক্টোবর রথীন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে ফোরকান হোসেনের বিরুদ্ধে পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। এরপর ১০

নভেম্বর রথীন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে একই আদালতে রিয়াজুল ও ফোরকানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন। গত ৩০ এপ্রিল চেক জালিয়াতি মামলায় আদালত ফোরকানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

রথীন্দ্র নাথ রায় আরও বলেন, রিয়াজুল ইসলাম ও ফোরকান হোসেন জেলা জজের কার্যালয়ের চাকরির কথা বলে চারজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ ও মোংলা বন্দরে আমার দুই আত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আরও দুই লাখ টাকা নেন। এসব টাকা বিভিন্ন সময়ে নগদ, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়। চাকরি দিতে না পারায় আমি ওই

টাকা চাইলে ফোরকান বলেন চাকরি হবে। আর না হলে আমি ৪২ লাখের বদলে ৭০ লাখ টাকার দিব। এরপর সে আমাকে ৭০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। রিয়াজুল ইসলামের মামা ঢাকায় গাড়ি ব্যবসায়ী আসলাম সেরনিয়াবাদ একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই

রিয়াজুল তাঁর মামার ভয় দেখিয়ে বলে মামলা দিয়ে আমার কিছুই করতে পারবি না।

রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমি এসবে জড়িত নই। যা করেছে ফোরকান ও রথীন্দ্র নাথ রায়। রথীন্দ্র নাথ রায় আমার ব্যাংক একাউন্টে এক লাখ টাকা পাঠিয়েছিল ফোরকানকে দেওয়ার জন্য। ফোরকান হোসেন বলেন, আমার রথীন্দ্র নাথ রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে রিয়াজুলের মাধ্যমে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। আমরা আইনের মাধ্যমে বিষয়টি মোকাবিলা করব।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিরোজপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। কিছু সাক্ষী দূরে থাকায় তদন্তে সময় লাগছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমীনুল ইসলাম বলেন, রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর