পবিত্র রমজান মাসে যাতে নিত‌্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি পণ্য সংকট সৃষ্টিকে ‘গর্হিত কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ‌্য নিয়ে কাজ শুরু করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে প্রথম ধাপে ২০২১ সালে ৫০টি এবং এ বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগ সরকারের এই মডেল মসজিদ স্থাপন প্রকল্প বিশ্বের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, মজুতদারি বা কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি এটা যেন কেউ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে আমি সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘রমজান মাস কৃচ্ছতা সাধনের সময় এবং মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং রোজা যথাযথভাবে পালন করতে পারে সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সে সময় এসব মুনাফা লোভীদের জিনিষের দাম বাড়ানো আর মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ইমামরা যখন মসজিদে জুম্মার নামাজের খোৎবা দেন তখন কালোবাজারি বা মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দেওয়া আর অযথা মানুষকে কষ্ট দেওয়া যে গর্হিত কাজ সে ব্যাপারে মানুষকে আপনাদের আরও বলা উচিত। খোৎবাতেও এটা বলতে পারেন বা মানুষকে সচেতন করতে পারেন।

তিনি বলেন, সেভাবেই কাজ করতে আমি মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খাদেমগণকে অনুরোধ করবো। তাহলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়ার প্রবণতা নিশ্চই কমবে।

নিম্ন আয়ের মানুষের ন‌্যায‌্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার পারিবারিক কার্ডের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অধিক দামে চাল ক্রয় করে ৩০ টাকা মূল্যে বিভিন্ন পরিবারকে দিচ্ছি। রমজানকে সামনে রেখে আরও ১ কোটি মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে আমরা চাল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি এবং একেবারে কর্মক্ষমতাহীনদের বিনা পয়সায় ৩০ কেজি করে চালও দিয়ে যাচ্ছি। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ন‌্যায‌্যমূল্যে এই নিত্যপয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ সরকার যাতে আরও ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারে সেজন্য সবার কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। তার সরকার গৃহহীন-ভূমিহীনকে বিনামূল্যে ঘরবাড়ি এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। শ্রমিকদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। বিদেশগামীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণেরও ব্যবস্থা করেছে।

কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরবে, এটা তার সরকার চায় না বলেই সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

এতে ভার্চুয়ালি বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কমকর্তা, আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণ সংযুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

মডেল মসজিদগুলোয় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া থাকবে হজ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও পবিত্র কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক সম্মেলনকক্ষ। আরও থাকছে ইসলামি দাওয়াত, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র ও মসজিদের সঙ্গে দেশি–বিদেশি অতিথিদের জন্য একটি বোর্ডিং সুবিধা।

প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন সারা দেশে একযোগে মোট ৫৬৪টির মধ্যে ৫০টি মডেল মসজিদের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭৫ সালের ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইন প্রণয়ন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here