পটুয়াখালীতে তরমুজের বাম্পার ফলন, খুশি কৃষকরা
পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষকরা এখন তরমুজের গাছ পরিচর্যা ও তরমুজ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি। কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার ২ হাজার কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি হবে। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ করা হয়েছে।
জেলার কৃষকরা আগাম তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে তরমুজের বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে পটুয়াখালীতে তরমুজ বিক্রির জন্য বড় কোনো পাইকারি বাজার না থাকায় অধিকাংশ কৃষক মাঠেই তরমুজ বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা মাঠ থেকেই তরমুজ কিনে নিচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব কিছু বেশি দামের বাজারে তারা কাঙ্ক্ষিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বালিয়াতলী এলাকার চাষি শাহাবুদ্দিন মুনসী বলেন, ‘আসলে তরমুজে লাভের টাকাটা ফরিয়ারাই খেয়ে ফেলে। আমাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকায় ক্ষেত কিনে ঢাকাসহ অন্য এলাকায় নিয়ে সেই তরমুজ বিক্রি করে অন্তত ১০ লাখ টাকা। আমরা খালি খাইট্টাই গেলাম। তিন মাস আমরা শ্রম দিয়েছি, এখন ফলন পাইতেছি। কিন্তু লাভ কী হবে? ভালো দাম পাইতেছি না। আমরা ক্ষেতে যেই তরমুজ ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি, তা তারা বাজারে নিয়ে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি করে। তরমুজের স্থায়ী পাইকারি বাজার থাকলে হয়তো দরদাম করতে পারতাম।’
একই এলাকার কৃষক খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমি দুই লাখ টাকা লোন ছাড়াইছি। ১০ টাকা সুদে দেড় লাখ টাকা কর্য নিয়া দুই কানি ১০ কড়া জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এখন যে জমিতে ওষুধ, সার দিমু; হেই টাহাডা পর্যন্ত নাই। আইজ আবার কর্য করতে লোক পাঠাইছি। এখন খুব সমস্যায় আছি। তরমুজ বিক্রি করে এইসব দেনা পরিশোধ করমু। তয় আল্লায় দেলে ফলন ভালোই হইছে। এহনও বিক্রি করা শুরু করি নাই।’
পটুয়াখালীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আকার অনুযায়ী ৩৫০-৪০০ টাকায় প্রতি পিস তরমুজ কেনা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার রমজানে তরমুজের ভালো চাহিদার পাশপাশি কৃষক দামও ভালো পাবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান বছরে পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগাম তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পরই রমজান শুরু হবে। তখন তরমুজের চাহিদাও বেশি থাকবে। কৃষক ভালো দামও পাবেন। আশা করি জেলায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি হবে। কৃষকরা বাজার যাচাই বিক্রি করলে ভালো দাম পাবেন। উৎপাদনের পাশপাশি কৃষিপণ্যের বাজার সম্পর্কেও কৃষকদের ধারণা রাখতে হবে।’
তরমুজ আবাদে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই কৃষকদের সেচের সুবিধা নিশ্চিত করাসহ বীজের আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশপাশি সার ও কীটনাশকের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন কৃষিখাত সংশ্লিষ্টরা।