বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন

আল্লাহু আল্লাহু জিকিরের ধ্বনিতে মুখরিত চরমোনাই ময়দান

রিপোর্টারের নাম / ৬৫ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্বির্য পরিবেশে আগামীকাল (১৫ ফেব্রুয়ারী) বুধবার যোহর বাদ জুমা চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী বয়ানের মধ্যদিয়ে তিন দিনব্যাপী মাহফিলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।

এই মাহফিল আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী সকালে আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

’আল্লাহু আল্লাহু’ ’লা ইলাহা ইল্লাল্লা’ ’লা ইলাহা ইল্লাল্লা’ ধ্বনিতে ছয়টি বিশাল ময়দান মুখরিত। বিশাল বিশাল শামিয়ানার নীচে আগত মুসলমানদের তিল ধরার ঠাঁই ছিল না। দুনিয়ার প্রার্থিক কোনো কিছু পাওয়ার মানসে নয়; একমাত্র রূহানী খোরাক, আল্লাহমুখী হওয়া ও তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যেই সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান ঐতিহাসিক চরমোনাইতে ফাল্গুনের তিন দিনব্যাপী মাহফিলের এসব ময়দানে জড়ো হয়েছেন।

উত্তরাঞ্চল থেকে চরমোনাই ময়দানে আগত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের বাপ দাদারা যুগ যুগ ধরে এই দরবারে আসতেন একমাত্র আল্লাহমুখী ও তাকওয়া অর্জনের জন্য। চরমোনাই দেখতে আসছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ বলেন, চরমোনাই পীরের দরবারে আমাদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এখানে যেসব আমলের বয়ান ও দুনিয়া আখেরাতের দিক নির্দেশনা দেয়া হয় তা’হাসিলের জন্যই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। বাকিটা আল্লাহ কবুল করার মালিক।

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে ঐতিহাসিক চরমোনাই ময়দানে তিন দিনব্যাপী মাহফিলে লাখো মুসল্লির পদচারণা ও আল্লাহু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে চরমোনাই গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। আসলে নদী বেষ্টিত দ্বীপ চরমোনাই ধর্মীয় মনোরম পরিবেশ দেখে সকলেরই মন ভরে যায়। চরমোনাইর মরহুম দাদা হুজুর মাওলানা ইছহাক সাহেব (রহ.) এর নিকট আত্মীয় সুফি মাওলানা আহসানুল্লাহ (রহ.) ১৯২৪ সালে চরমোনাইর দ্বীপে একটি ছোট্ট কুড়ের ঘরের মাধ্যমে মক্তব দিয়ে মাদরাসার কার্যক্রম চালু করেন। বর্তমানে চরমোনাইতে কওমি মাদরাসা, আলিয়া মাদরাসা, কোরআন শিক্ষা বোর্ড, কেরাতুল কোরআন মাদরাসা ও মহিলা মাদরাসায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ছাত্র ছাত্রী দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যায়নরত।

দেশের আনাচে কানাচে থেকে আল্লাহর পাগলরা কাফেলা নিয়ে দলে দলে ছুঁটে আসে চরমোনাইর পানে। মুখে ছিলো আল্লাহর জিকির আর হৃদয়ে আল্লাহভীতি। জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতে যাওয়ার যন্ত্রণায় তারা কাতর ছিলো প্রতিনিয়ত। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মাহফিল অনুষ্ঠানের লক্ষে মুজাহিদ কমিটির শত শত স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা ময়দানে কঠোর দায়িত্ব পালনে ছিল সদাজাগ্রত। মাহফিলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও সজাগ ছিল। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয় মাহফিলের ময়দান।

চরমোনাই অগ্রহায়ন ও ফাল্গুনের মাহফিলে লাখ লাখ আল্লাহ ওয়ালারা আত্মশুদ্ধির মিলন মেলায় জড়ো হয়েছেন। তারা জড়ো হয় আল্লাহর বিধি বিধান জেনে শুনে মেনে চলার তাগিদে। হাজারো অপরাধী চরমোনাই মাহফিলে গিয়ে পীর সাহেব চরমোনাই’র বয়ান শুনে তারা পেয়েছে আল্লাহর পরিচয়। চরমোনাই মাহফিলে উপস্থিত হওয়া শ্রোতাদের জন্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নেই কোনো খাওয়ার ব্যবস্থা। মাইক, লাইট, উপরে শামিয়ানা টানিয়ে দিতেই কে হিমসিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। প্রতি মাহফিলে শ্রোতাদের জন্য মাঠ বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। এবারের মাহফিলে শ্রোতাদের জন্য ৭ টি মাঠ তৈরি করতে হয়েছে। মাহফিলে আগত বিশাল জনগোষ্ঠীর টয়লেট, বাথরুম, অজু গোসলের জন্য মাহফিল কর্তৃপক্ষের আয়োজনের পাশাপাশি স্থানীয়রা ও নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা করে থাকেন।

মাহফিলে আগত মুসল্লিদের ৫ হাজার গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কীর্তনখোলা নদীর দিকে প্রায় ৩ কিলোমিটার যায়গায় বিপুল সংখ্যক লঞ্চ নোংগর করে রাখা ছিলো। বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও অন্যান্য যানবাহন যোগে মাহফিলে মুসলমানরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হন। ওপারের চরে মাঝে একাধিক অস্থায়ী গণশৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাহফিলের শামিয়ানাগুলোতে অবস্থান নেয়া লাখ লাখ মুসলমানের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে চরমোনাই মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা গেছে। আশপাশের গ্রামবাসিরাও মাহফিলে আগত অনেক মুসলমানকে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে আছেন।

এছাড়া অস্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১০০ শয্যার হাসপাতাল। যাতে দেশের নামিদামি চিকিৎসকরা স্বেচ্ছায় ফ্রি চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষ ঔষধ বিতরণ করেছেন। হামদর্দসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করে অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর