বিশ্বে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশী ছোঁয়া
লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের এলাকায় বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে বিবিসির তালিকায় বিশ্বে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় ঠাঁই হয়েছে এক বাংলাদেশী তরুণীর।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশী তরুণী সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার নাম রয়েছে ২১ নম্বরে।
সানজিদা ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভুইয়া সোহেলের মেয়ে। তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
তালিকা প্রকাশের পর বিবিসি বাংলা থেকে মুঠোফোনে খবর জানানো হয় সানজিদা ইসলাম ছোঁয়াকে। এই খবর প্রকাশের পরপরই সানজিদার পরিবারসহ আশপাশের এলাকায় চলছে আনন্দের বন্যা।
বিবিসির এই তালিকায় অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন, পেলেস্টাইনের নারী আল জাজিরার সাংবাদিক লিনা আবু আকলেহ। যাকে ইজরাইলীরা গুলি করে হত্যা করেছিল। আরও আছেন সিরিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌড়বিধ দিমা আক্তা, ভারতে বলিউড অভিনেত্রী ও প্রযোজক প্রিয়াংকা চোপড়া, ইরানি অভিনেত্রী জার আমির ইব্রাহিমি. আফগানিস্থানের শিক্ষার্থী ফাতিমা আমিরি, মিয়ানমারের চিকিৎিসক আই নাইন তো, রাশিয়ার সাংবাদিক তাইসিয়া বেকবোলাটোভাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা।
এই বিষয়ে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে একটি নম্বর থেকে বিবিসির পরিচয় দিয়ে বলা হয় আমি বিশ্বের ১০০ নারীর তালিকায় আছি। যা শুনে হতবাক হয়ে যাই। এই তালিকা কী, কেন জানতে ইচ্ছা হলেও আমি তখন বলতে পারছিলাম না। এরপর মা-বাবাকে বিষয়টি জানাই। তাঁরাও তখন বিষয়টি আমলে নেননি। এরপর আমার মোবাইলে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়। যা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার নামের আগে রয়েছেন ভারতের বিখ্যাত নায়িকা ও প্রযোজক প্রিয়াংকা চোপড়ার নাম। যা অবিশ্বাস্য।’
ছোঁয়া আরও বলেন, ‘আমার মা লিজা আক্তার বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছিলেন। চোখের সামনে দেখেছি বাল্য বিয়ের কুফল কী। সব সময়ই মা অসুস্থ থাকেন। এ অবস্থায় তিনি যখন বিদ্যালয়ে পড়ি তখনও দেখি আমার সহপাঠীদের মধ্যে বাল্য বিয়ে হচ্ছে। তখন কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে গঠন করি একটি সংগঠন। নিজের ও আশপাশের এলাকায় বাল্যবিয়ের খবর পেলে সেখানে প্রতিবাদ করি ও বিয়ে বন্ধ করি। এককভাবে অনেক সময় সম্ভব না হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিয়েছি।’
তৎকালীন সময়ে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
ছোঁয়ার মা লিজা আক্তার বলেন, ‘মেয়ের এমন কর্মকান্ড নিয়ে অনেক সময় হুমকি-ধামকির মধ্যেও থাকতে হয়েছে। কারণ একটি বাল্য বিয়ে বন্ধের পর এই সমাজে এখনো অনেকেই এটাকে ভালো চোখে দেখে না। তারপরও নিজের জীবনের বাস্তব অবস্থা কথা চিন্তা করে মেয়েকে উৎসাহ দিতাম বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য। কিন্তু কখনো ভাবিনি মেয়ের কাজের কোন স্বীকৃতি পাবে। তবে এখন খুব ভালো লাগছে।’
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল মনসুর বলেন, ‘সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার সাফল্য নান্দাইলবাসী এমনকি সারা দেশের জন্য গর্বের। সে একা ৫০ বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছে। আমি মনে করি, তার পাশাপাশি সমাজের সকলকে এমন কাজে এগিয়ে আসা দরকার। জনকল্যাণমুখী যেকোনো কাজে উপজেলা পরিষদ সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে।’
বিবিসিত সানজিদা ইসলাম ছোয়া সম্পর্কে প্রকাশ করা হয়েছে, বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা অবস্থায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তাঁর ভূমিকা অনন্য। নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সাত সহপাঠী নিয়ে তিনি গঠন করেছিলেন ‘ঘাসফড়িং’ নামে সামাজিক সংগঠন। পরবর্তীতে তিনি সংগঠনের বাইরেও নিজে প্রায় ৫০টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেন। এই স্বীকৃতি হিসাবে বিবিসির ১০০ নারী তালিকায় তাঁর নাম অর্ন্তভুক্ত হয়।