শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

পিরোজপুরে পি কে হালদারের পৈতৃক ভিটায় শুধু ভাঙা ঘর, আতঙ্কে স্বজনেরা

রিপোর্টারের নাম / ২৪৭ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : সোমবার, ১৬ মে, ২০২২

হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে ভারতের কলকাতায় ভুয়া পরিচয়ে বসবাস করছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদারকে গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এ সময় তাঁর ভাই, স্ত্রীসহ পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাটকারী পি কে হালদারের কলকাতায় বিলাসী জীবন যাপনের তথ্য উঠে আসছে। তাঁর এই সিন্ডিকেটের একটি অংশ তাঁর মতোই সাধারণ পরিবার থেকে আসা।

 

তাঁদের সবার বাড়ি পি কে হালদারের জন্মস্থান পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার তিন সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা ও তাঁর মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়।

 

পি কে হালদারের বাবা পিরোজপুরের একটি বাজারে দরজির কাজ করতেন। তাঁর সহযোগীরাও সাধারণ পরিবার থেকে এসে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় দামি ফ্ল্যাটসহ দেশে-বিদেশে তাঁদের সম্পত্তির খোঁজ মিলছে।

 

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজানের প্রণবেন্দু হালদারের (মৃত) বড় ছেলে পি কে হালদার। আর রাজেন্দ্রনাথ মৃধার (মৃত) ছেলে সুকুমার মৃধা ও তাঁর মেয়ে অনিন্দিতার পৈতৃক বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের বাকসি গ্রামে। সুকুমার মৃধার বাবা ছিলেন গ্রাম্য চৌকিদার।

 

পি কে হালদারের সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ওরফে কেয়ার গ্রামের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলা গ্রামে। পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়া এলাকায়ও তাঁদের একটি বাড়ি আছে। অবন্তিকার বাবা ছিলেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রভাষক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার বড়াল।

 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পি কে হালদারের বাবা প্রণবেন্দু হালদার পেশায় ছিলেন দীঘিরজান বাজারের একজন দরজি। মা লীলাবতী হালদার ছিলেন স্কুলশিক্ষক। পি কে হালদার দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষে বেক্সিমকো গ্রুপের জুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন।

 

১৫-১৬ বছর আগে ভিন্ন ধর্মের এক নারীকে বিয়ে করার পর থেকে পি কে হালদার গ্রামছাড়া। তাঁর এই অর্থ পাচারের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর মা আরেক ছেলে প্রীতিশ হালদারের বাড়ি ভারতের অশোকনগরে চলে গেছেন। পি কে হালদারের আরেক ভাই প্রাণেশ হালদার কানাডায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

 

দীঘিরজান গ্রামে পি কে হালদারের প্রতিবেশী কলেজশিক্ষক অধ্যক্ষ দীপ্তেন মজুমদার জানান, প্রশান্ত হালদারকে মেধাবী ছাত্র বলে জানেন তাঁরা। এলাকায় তেমন একটা আসা-যাওয়া ছিল না।

 

মানুষ জানত প্রকৌশলী হিসেবে অনেক বড় চাকরি করেন। ১৫-১৬ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন বলে গ্রামে খবর রটে। তাঁর জীবনযাপন রহস্যজনক বা ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করে ধর্মত্যাগী হয়েছেন এ রকম খবর ছিল। কুষ্টিয়ায় একটি জুট মিলসহ তাঁর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল বলে মানুষ জানে। অঙ্গন হালদার নামে নিজ গ্রামের এক ব্যক্তি ম্যানেজার হিসেবে পি কে হালদারের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করেন।

 

দীঘিরজান গ্রামে মা লীলাবতীর নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন পি কে হালদার, সেটিরও তত্ত্বাবধায়ক অঙ্গন হালদার। বর্তমানে পি কে হালদারের গ্রামের বাড়িতে পুরোনো একটি টিনশেড ঘর আছে, সেখানে তাঁর চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার পরিবার নিয়ে থাকেন।

পিরোজপুরে পি কে হালদারের পৈতৃক ভিটায় শুধু ভাঙা ঘর, আতঙ্কে স্বজনেরাদীঘিরজান গ্রামে ওই বাড়িতে গেলে দীপেন্দ্র নাথ হালদার, তাঁর ছেলে দ্বীপ হালদার ও মেয়ে স্মৃতি হালদারের সঙ্গে দেখা হয়।

দীপেন্দ্র নাথ হাওলাদার বলেন, ভাঙা বাড়িটি দেখেশুনে রাখছেন। কিন্তু প্রশান্ত বা তাঁর ভাইরা কেউই তাঁদের খোঁজখবর রাখেন না। পি কে হালদারের এই কেলেঙ্কারির খবর শোনার পর তাঁরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

 

এদিকে পি কে হালদারের আয়কর উপদেষ্টা বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন একই উপজেলার বাকসি গ্রামের চৌকিদার রাজেন্দ্রনাথ মৃধার ছেলে সুকুমার মৃধা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকে নিজ গ্রাম নাজিরপুর, পিরোজপুর ও খুলনায় একজন দানশীল, শিক্ষানুরাগী, গণমাধ্যমের সেবক এমন নানা খ্যাতি ছড়াতে থাকে। পেশাগত জীবনে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, খুলনার রূপসা কলেজের অধ্যক্ষসহ একাধিক চাকরি করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারান বলে জানা যায়।

 

নিজ গ্রাম বাকসিতে রাজলক্ষ্মী ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে সরকারি খাসজমিতে মহাবিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মন্দির, দুস্থ ছাত্রীনিবাস, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া এলাকায় অনেক মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল।

সুকুমার মৃধার খুলনায় ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ নামে অধুনালুপ্ত একটি সংবাদপত্র ছিল। পার্শ্ববর্তী বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামে ৫০ বিঘা জমিতে একটি হরিণের খামার করেছিলেন। বন আইন লঙ্ঘন করে হরিণ বিক্রি ও মহলবিশেষকে ম্যানেজ করতে হরিণের মাংস ভ্যাট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সুকুমারের বিরুদ্ধে। তিনি পি কে হালদারের দেহরক্ষীর সঙ্গে নিজের মেয়ে অনিন্দিতার বিয়ে দিয়েছেন।

 

তাঁর বোন মঞ্জু রানীর দুই ছেলে স্বপন মিস্ত্রি ও উত্তম মিস্ত্রিও পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। আদালতের মাধ্যমে এই দুজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্বপন এরই মধ্যে ভারতে চলে গেছেন। উত্তম আত্মগোপনে।

 

অভিযোগ রয়েছে, পি কে হালদার মাঝে মাঝে সুকুমারের বাকসির রাজলক্ষ্মী ফাউন্ডেশনের গেস্টহাউসে বান্ধবীসহ থাকতেন। দুই বোন, তাঁদের ছেলে ও স্বামীদের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সুকুমার তাঁদের পরিচয় দেন না বলে আত্মীয়স্বজনের আক্ষেপ রয়েছে। সুকুমারের স্ত্রী ঢাকায় সোনালী ব্যাংকে চাকরি করেন।

দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার পি কে হালদারের সহযোগী ও বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ওরফে কেয়ার গ্রামের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলা গ্রামে হলেও পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়া এলাকায়ও তাঁদের একটি বাড়ি রয়েছে।

 

অবন্তিকার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার বড়াল ছিলেন সরকারি কলেজের প্রভাষক। অবন্তিকা বড়াল ও তাঁর দুই ছোট বোন খুমুরিয়া এলাকার বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে এখানকার লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে অবন্তিকা ঢাকায় গিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।

 

জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সাতমসজিদ রোডে দামি ফ্ল্যাট রয়েছে অবন্তিকার। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ওই ফ্ল্যাটে তাঁর বিধবা মা অপর্ণা বড়াল ও অন্য দুই বোন বসবাস করছেন। অবন্তিকা গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে তাঁর মা অপর্ণা বড়াল পিরোজপুরের বাড়িতে এসেছিলেন। দুই-তিন দিন থাকার পর ঢাকায় চলে যান। জানা গেছে, অপর্ণা বড়াল পিরোজপুরে এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি ঘর বরাদ্দ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুমুরিয়া এলাকায় তাঁদের এক প্রতিবেশী জানান, কয়েক দিন আগে অবন্তিকার মা খুমুরিয়ার বাসায় এসেছিলেন। তখন মেয়ের ফ্ল্যাটবাড়ির গল্পও করেছেন। বলেছেন, মেয়ে তিন কোটি টাকা দিয়ে ঢাকায় অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট কিনেছেন। বর্তমানে পিরোজপুরের খুমুরিয়ার বাড়িটি তালাবদ্ধ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর