ঈদকে সামনে রেখে কৌশল পাল্টে দক্ষিণাঞ্চলে আসছে মাদকের চালান
পটুয়াখালীর বাউফলের কালিশুরী ইউনিয়নের শিবপুরের বাসিন্দা ফয়সাল হাওলাদার। গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের বাংলাবাজার এলাকার একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয় থেকে হবিগঞ্জ থেকে আসা মালামাল ছাড়িয়ে ভ্যানযোগে নদীবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।
পথে ভ্যানটিকে থামায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। এরপর ফয়সাল হাওলাদারকে (৩২) আটকের পাশাপাশি ভ্যানে থাকা ব্যাগের ভেতরে তল্লাশি চালান পুলিশ সদস্যরা। সেখান থেকে ১২টি পলিথিনের প্যাকেটে ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
আগের দিন ১৫ এপ্রিল বিকেলে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দক্ষিণ তিমিরকাঠি অটোস্ট্যান্ডে ১২ কেজি গাঁজা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা রহিম (৩৪) ও মো. মাহফুজুল ইসলাম সবুজ (৩১)। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বরিশাল র্যাব-৮ এর সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে অভিযানে চালিয়ে গাঁজাসহ ওই দুজনকে আটক করেন।
একইভাবে গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় বরিশাল নদীবন্দর থেকে ৮ কেজি গাঁজাসহ মো. নাজমুল আলম রাজু (২৯) ও তার স্ত্রী হালিমা বেগমকে (২৫) আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তারা উভয়ই চট্টগ্রাম মহানগরের বাসিন্দা।
সম্প্রতি বরিশাল মহানগরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে এভাবেই বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ মাদক কারবারিদের আটক করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেন্সিডিল, আইসের মতো মাদকও জব্দ করা হয়েছে।
তবে র্যাব-পুলিশের এত এত অভিযানেও টনক নড়ছে না কারবারিদের। গত ১৬ দিনে বরিশাল মহানগর ও জেলায় প্রায় অর্ধশত অভিযান চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো অভিযানই বৃথা যায়নি, উদ্ধার হয়েছে মাদক, গ্রেফতার হয়েছেন কারবারি।
কৌশল পাল্টে হলেও ছোট ছোট মাদকের স্পটগুলোতে চলছে মাদকের বেচাকেনা। আর মাদকের কারবার ধরে রাখতে সড়কের পাশাপাশি নৌপথে কোনো না কোনোভাবে প্রতিনিয়ত মাদকের চালান ঢোকানোর চেষ্টা চলছে বরিশাল নগরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলাগুলোতে।
যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তাদের কঠোর নজরদারির কারণে বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে মাদক উদ্ধার ও ছোট থেকে বড় কারবারি গ্রেফতার বেশি হচ্ছে। এতে করে মাদক কারবারিরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কৌশল পাল্টেও ধরা পড়ছেন মাদক কারবারিরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, করোনাকালে লকডাউন, সীমান্তে কঠোরতাসহ নানান কারণে গত দুই বছর ধরে সব ধরনের মাদকেরই সংকট ছিল। তবে চলতি বছরের শুরুতে কিছু কিছু কারবারি বিশেষ করে গাঁজার সঙ্গে জড়িতরা ভালোভাবেই কারবার করছিলেন।
কিন্তু গত দুই মাসে পুলিশ ও র্যাবের টানা অভিযানের কারণে কারবারিরা আবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই ক্যাম্পাসভিত্তিক ছোট ছোট কারবারিরা ভালোভাবেই কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোহেল (ছদ্মনাম) নামে একজন মাদকসেবী জানান, গত দুই মাসে বরিশাল মহানগর ও আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে গাঁজা সংগ্রহ করতে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দামও বেড়ে যায়।
এই মাদকসেবীসহ আরও কয়েকজন জানান, ঈদ বা যে কোনো উৎসবকে ঘিরে সক্রিয় থাকে মাদক কারবারিরা। বর্তমানে গাঁজার দাম কম হওয়ায়, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মাদক কারবারিরা বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান মাদক সিন্ডিকেটের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিরিক্ত আইজিপি ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির কারণে অভিযানগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। আর অভিযান বাড়ায় মাদক উদ্ধারের পরিমাণের সঙ্গে কারবারিদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বরিশালে মাদক তৈরি হয় না, এটা অন্য জায়গা থেকে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, বড় মাদক কারবারিরা হয়তো এই সময়টাতে বেশি বেশি গাঁজার চালান সংগ্রহ করছেন।
আর সেগুলো মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র, মধ্য কারবারিদের কাছে সরবরাহের চেষ্টা করছেন। তবে বরিশালে গাঁজাসহ সকল মাদকের বিরুদ্ধেই আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
আমরা আশা করি, সাঁড়াশি অভিযানের মধ্য দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো। অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, প্রতিটি উৎসবকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসায়ীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
তবে ঈদের আগে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে, যাতে ঈদের সময় বরিশালের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে।