বরিশালে বৃষ্টির দেখা নেই গরমে পুড়ছে ফসল, দিশেহারা কৃষক
সারা দেশে বৃষ্টি হলেও বরিশালে বৃষ্টির দেখা নেই। গরমে পুড়ছে এ অঞ্চল। পুড়ছে ফসলের খেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, গত চার বছরে বরিশালে মার্চ-এপ্রিলের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করে বলছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বরিশালের নানা সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমন খরা অব্যাহত থাকলে বোরো, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও মুগ ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালের মার্চে বরিশালের গড় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
একই বছরের এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিলে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.২ এবং ৩৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০২১ সালের মার্চ ও এপ্রিলে ছিল ৩৩.৯ এবং ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.৮ এবং ৩৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
পর্যবেক্ষক মাজহারুল আরও বলেন, ‘গত ৪ বছরের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছরই ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ছে।’
তিনি মনে করেন, চলতি এপ্রিলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। উত্তরাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হলেও এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের নানা খাতে চিন্তায় ফেলছে।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাচ্ছে। নদীমাতৃক বরিশালে বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু সারা দেশে বৃষ্টি হলেও বরিশালে নেই।
বিজ্ঞানের ভাষায় এর কারণ হতে পারে, বাতাসে যথেষ্ট পরিমাণ মৌসুমি বায়ু নেই। যে কারণে এ অঞ্চলে খরার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
১০ বছর আগেও নদী, পুকুর, ডোবা, খাল–বিলের পানি ব্যবহার করা গেলেও পানির সেসব উৎস কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে।
সবজি আবাদ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু মার্চ–এপ্রিলের টানা খরায় চিন্তিত কৃষক।
বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল গ্রামের চাষি সাইফুল ইসলাম মামুন জানান, তিনি এ বছর ৩৫ শতাংশ জমিতে টমেটো, করলা ও শসা করেছেন।
কিন্তু খরায় গাছ পুড়ে যাওয়ায় টমেটোর চরম ক্ষতি হয়েছে। আর করলা গাছ হলুদ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘খরায় সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি না হলে সংকটে পড়তে হবে।’
জানতে চাইলে বরিশাল সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘এই খরায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বোরো এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির ওপর। এতে হিট স্ট্রোক দেখা দিতে পারে।
বোরো ধান পর্যাপ্ত পানি না পেলে চিটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য ৪ ইঞ্চি পরিমাণ পানি দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে।’
এ ব্যাপারে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এই সময়ে পানি দরকার। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না।
খেতে সেচের বিকল্প নেই। এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পানি সংকট কীভাবে কাটানো যায় তাঁর পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের।’