আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর হামলা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এর পর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয় বিজয়। প্রতিষ্ঠিত হয় সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ইতিহাস ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, ২ লাখ মা-বোনের ত্যাগ এবং কোটি বাঙালির বীরত্বের ইতিহাস।
১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্র। এরপর শুরু হয় বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র।
পাকিস্তানি হানাদারদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি জাতি। স্বাধীনতা লাভের দৃঢ় প্রত্যয়ে উজ্জীবিত বাঙালির সামনে কোনো মারণাস্ত্রই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাঙালি জাতিকে মুক্তির এই মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান ইতিহাসের মহানায়ক, মহাবীর, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ১৯৫৬ সালের সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন প্রভৃতি ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকারের অধীনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের এই ধারাবাহিক সংগ্রামে জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই বার ফাঁসিকাষ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি বাংলার মানুষকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত, সংবিধান, বিশ্বের বুকে গর্বিত পরিচয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী-মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া, শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে সহ্য করে বাংলার কৃষক-শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফোটাতে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অম্লান এবং বাংলার জনতার হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আজও আমাদের প্রেরণা জোগায় নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার, দেশ গড়ার কাজে আত্মনিবেদিত থাকার। এর মধ্য দিয়েই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আসবে প্রকৃত মুক্তি। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।