শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

রিপোর্টারের নাম / ২৫৩ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯

ঝালকাঠির সীমান্তে আটঘরে নানা রকমের নৌকা নিয়ে জলে আর স্থলে জমেছে হাট-বাজার। কেনাবেচা হচ্ছে বেশ। বর্ষা মৌসুম এলেই আটঘর বাজারে জমে ওঠে ভাসমান নৌকার হাট। প্রায় শত বছর ধরে প্রতি শুক্র ও সোমবার উপজেলার আটঘর কুরিয়ানার মানপাশা বাজার সংলগ্ন আটঘর খালের ভাসমান এ নৌকার হাট এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। তবে নানা অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণে বর্তমানে হারাতে বসেছে সেই ঐতিহ্য।

পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর গ্রামে শতবছর ধরে নৌকার হাট বসছে। পিরোজপুর ছাড়াও ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভারামচন্দ্রপুর, কীর্তিপাশা আর বাউকাঠি ইউনিয়নের কমপক্ষে দশ গ্রামের নৌকার কারিগররা হাটে নৌকা বেচতে আসেন। তাই বর্ষা আসার আগেই গ্রামের বাড়ি বাড়িতে চলে নৌকা তৈরির ধুম। নৌকার হাটে ক্রেতারা আসেন পুরো বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার হাট বসে। জলে আর স্থলে যেখানেই চোখ পড়বে নৌকার সারি দেখা যাবে হাটের পুরো মাইল খানেক এলাকা জুড়ে। বর্ষা মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের পেয়ারাহাট, সবজির হাট, কৃষি, মাছ ধরা এমন কি অনেক গ্রামে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতেও নৌকাই একমাত্র বাহন। তাই আষাঢ়ে শুরু হওয়া এ হাট জমজমাট থাকবে আরও দুই মাস ধরে।

স্থানীয়রা জানায়, এক সময় গুটি কয়েক নৌকা নিয়ে হাট বসত। আর এখন মাইল খানেক এলাকাজুড়ে পাঁচ হাজার নৌকা বেচাকেনা হয় প্রতি হাটে। অনেকে পুঁজি খাটিয়ে নৌকার কারিগর রেখেও নৌকা তৈরি করছেন হাটে বেচার জন্য। বর্ষা জুড়ে চারমাস চলবে নৌকার জমজমাট হাট। এখন প্রতি হাটে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হচ্ছে। আর নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সাধারণ নৌকার কারিগর, গৃহস্থ, মিস্ত্রী এবং ফড়িয়াসহ ১০ হাজার পরিবারের জীবন জীবিকা চলছে।

জানা যায়, নদীমাতৃক এলাকা ঝালকাঠির যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নৌকা। বর্ষা মৌসুমে এ জেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় পানিতে। এ সময় পেয়ারার হাট, সবজির হাট ও মাছ ধরাসহ অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে দরকার হয় নৌকার। এমনকি নৌকার ওপরই বসে ভাসমান বাজার। সে কারণে বর্ষা মৌসুমে কদর বেড়ে যায় এ নৌযানের। চাহিদা বেশি থাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমেই জমজমাট হয়ে ওঠে আটঘর বাজারের ভাসমান নৌকার হাট। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ নৌকা কিনতে আসনে এ হাটে।

সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, খালে ও রাস্তার দুই ধারে কেবল নৌকা আর বৈঠা। মেহগনি, চাম্বল, কড়াই ও রেইনট্রি গাছ দিয়ে বানানো এসব নৌকা দেখতে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী আর উৎসুক মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। যে দিকে চোখ পড়ে সেদিকেই দেখা যায় সারিবদ্ধ বিভিন্ন আকারের নৌকা। এ দিকে এসব নৌকার কাঠ ও আকার ভেদে রয়েছে দামের ভিন্নতা। চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরি একটি আটহাত দীর্ঘ নৌকা বিক্রি হয় ১৮শ থেকে ২২শ টাকায়। এছাড়া ৯, ১০ ও ১২ হাত সাইজ পর্যন্ত বাহারি ডিজাইনের নৌকাও আসে এখানে।

ব্যবসায়ী রজিম উদ্দিন বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে এ হাটে একসঙ্গে অনেকগুলো নৌকা নিয়ে আসেন। অতীতে অনেক নৌকা বিক্রি হলেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। কাঠের মূল্য বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খাজনায় নৌকার দাম বেশি পড়ায় ক্রেতারা কম আসেন।

নলছিটির বৈচন্ডী গ্রাম থেকে আসা নৌকা ক্রেতা আনিচুর রহমান বলেন, তিনি হাটে তিনটি নৌকা কিনতে এসেছেন। কিন্তু শতকরা ১১ টাকা খাজনা ও নৌকার দাম বেশি হওয়ায় কিনবেন না। প্রতি বছর এ হাটে ইজারা মূল্যবৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত খাজনা আদায়ে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি হাটে খাজনা কমানোসহ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে নৌকা বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে।

অপরদিকে ইজারাদারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা শতকরা নয় টাকা খাজনা নিচ্ছেন। এর অতিরিক্ত কোনো টাকা নিচ্ছেন না।

এদিকে ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের মধ্যে এমন মতপার্থক্য চলতে থাকলে এক সময় ঐতিহ্যবাহী এ ভাসমান নৌকার হাট চিরস্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বিসিক উপব্যবস্থাপক মো. জালিস মাহমুদ বলেন, ‘মূলত হাটটি ভাসমান। দিন দিন হাটটি বিস্তৃত হচ্ছে। এই নৌকাগুলো তৈরি করে থাকে, তাদের অবস্থা ভালো না। তাদের জন্য বিসিক স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। তারা যেন ঋণ নিয়ে ভালো থাকে তারই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর