মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সার্ভিস চার্জ কমানোর তাগিদ
ক্যাশলেস বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের নেতারা বলছেন, এজন্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন সংগঠনের নেতারা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক ভালো কাজ করছি। কিন্তু বিষয়গুলো সবার নজরে আসে না। যেমন- ইভ্যালির বিরুদ্ধে আমরা আট মাস আগে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই রায় দেবো।’
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ সালে হলেও ২০২০ সাল থেকে কাজ শুরু করেছি আমরা। আমাদের লোকবল ও কর্মযজ্ঞে অনেক ঘাটতি রয়েছে। আমরা জানতাম মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কিন্তু পরে আমরা মাঠপর্যায়ে সার্ভে করে দেখলাম মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান বাজারের ৮০ শতাংশ দখল করে রেখেছে। কমিশন দ্রুত এ বিষয়ে কাজ করবে। সার্ভিস চার্জ যেন জনগণের সাধ্য ও সামর্থ্যের মধ্যে থাকে আমরা দেখবো। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় যেহেতু এ খাতে রেগুলেটরি, তাদের এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দরকার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংখাতে আমরা শুধু নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা দিয়ে থাকি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সময় একজনের আইডি ব্যবহার করে অন্যজন সিম ব্যবহার করায় কিছু অনিরাপত্তা এখনও রয়েছে। আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সার্ভিস চার্জ আরও কমিয়ে আনা যায় কীভাবে সে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ভেবে দেখার আহ্বান জানান।
ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ২০০৮ সাল থেকে কমিশনের আইন প্রণয়নের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। কিন্তু কমিশনগুলো নিজেরা শক্তিশালী না হবার কারণে দাঁত, নখবিহীন কমিশনে পরিণত হয়েছে। একচেটিয়া বাজার আধিপত্য রোধে কমিশনকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভারতে যদি কোনো পণ্যে দাম ২৫ থেকে ৫০ পয়সা বাড়ে সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের নাগরিকরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু বাংলাদেশে গ্রাহকদের ভেতর সমন্বয় না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক খালেদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ একটি কোম্পানি কীভাবে একক আধিপত্য বিস্তার ও উচ্চমূল্যের সার্ভিস চার্জ আদায় করলো এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী তাও ভেবে দেখা দরকার।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজির হোসাইন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না গেলে পরিণতি হবে ই-কমার্সের মতো। বাজারে দ্রুত আধিপত্য বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার মধ্যে এনে সার্ভিস চার্জ কমিয়ে কীভাবে বাজারে প্রতিযোগিতা আনা যায় এবং ছোট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা যায় এ ব্যাপারে কমিশনকেই ভূমিকা পালন করতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের দাবি ছিল প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণকে সুবিধা দিতে হলে সার্ভিস চার্জ কমিয়ে বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির বিকল্প নাই। তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার ‘ক্যাশলেস’ বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করতে হলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আনা ও বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রান্তিক গ্রাহকসহ বিভিন্ন সুধীজন বক্তব্য রাখেন।