বরিশাল বানারীপাড়া উপজেলায় ফুটবল খেলায় পরাজিত হয়ে মো. সাইমুন (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন হেরে যাওয়া খেলোয়াড় ও সমর্থকরা।

বুধবার রাতে তাকে গুরুতর অবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি হয়। সাইমুনের রক্তবমি হওয়ায় তার মাথায় সিটিস্ক্যান করা হয়। তবে তার অবস্থা গুরুতর বলে জানান স্বজনরা।

এর আগে বিকালে উপজেলায় পূর্ব-উদয়কাঠীর নান্দুহার ব্রিজসংলগ্ন একটি বালুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন, স্কুলছাত্র সাইমুনের মাথায় ও চোখে-মুখে জখম থাকায় বেশ কয়েকবার তার রক্তবমি হয়েছে।

এ কারণে বুধবার রাতেই শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাইমুনকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি তার মাথায় সিটিস্ক্যান করে দেখেছেন।

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাইমুনের সিটিস্ক্যান রিপোর্ট দেখার পর তার পরিবারকে জানাতে পারবেন বর্তমানে সাইমুনের শারীরিক অবস্থা কোনো পর্যায়ে রয়েছে। অপরদিকে থানা পুলিশ ঘটনাটি জেনে ওই রাতেই তদন্ত শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলার পূর্ব-উদয়কাঠী গ্রামের ব্যবসায়ী মো. পলাশসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব-উদয়কাঠীর নান্দুহার ব্রিজসংলগ্ন একটি বালুর মাঠে স্থানীয়রা দুভাগে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলে আসছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিকালে ওই বালুর মাঠে স্থানীয় ডাক্তারবাড়ি ও মৃধাবাড়ির মধ্যে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে প্রথম অর্ধের খেলা চলাকালীন দুপক্ষের খেলোয়াড়দের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়ার সময় ফাউল নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়।

এ নিয়ে ওই সময় দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতির সৃষ্টি হয়। এ সময় রেফারি ও কয়েকজন খেলোয়াড়ের হস্তক্ষেপে ওই উদ্ভট পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর পুনরায় সেখানে ফুটবল খেলা শুরু হয়।

ফুটবল খেলার নির্ধারিত সময় ডাক্তারবাড়ি ২-১ গোলে বিজয়ী হয়। খেলা শেষে বিজয়ী দলের খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে যে যার মতো বাড়ি চলে গেলেও সাইমুন তার পার্শ্ববর্তী একটি চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে রেস্ট করতে থাকে।

এ সময় ফুটবল খেলায় হেরে যাওয়া মৃধাবাড়ির খেলোয়াড় হাকিম মৃধা ও কায়েসসহ ৮-৯ জন পেছন থেকে সাইমুনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত জখম করে।

পরে স্থানীয়রা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাশে শেরেবাংলা বাজারের এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে বানারীপাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

পরে ওই রাতেই তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাইমুনের কাছে থাকা মামা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে সাইমুন বেশ কয়েকবার রক্তবমি করেছে।

এ ক্ষেত্রে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাইমুনের মাথায় সিটিস্ক্যান করে দেখেছেন। রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসকরা সাইমুনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তাদের জানাবেন।

এ ছাড়া সাইমুনের চোখে-মুখে ও কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম রয়েছে।

তিনি আরও জানান, তারা এ ঘটনাটি ওই দিন সন্ধ্যায় লবণসাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অবহিত করেছিলেন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় সাইমুনের পরিবার বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় একটি মামলা করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বানারীপাড়া থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. জাফর আহম্মেদ জানান, খবর পেয়ে ওই রাতেই তারা এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া অভিযোগ পেলে ওই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here