বরিশালের ঘটনা ‘পরিকল্পিত’, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলো আ’লীগ নেতারা
বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসভবন প্রাঙ্গনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে একটি শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি বরিশাল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নগর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাতের বেলাই হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন কোনো ভুল করেনি, বরং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিসিসি’র কাজে বাধা দিয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সেখানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনো হামলা চালায়নি। এখানে কারো হাত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ ইউএনও’র নির্দেশে নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেছে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। তাদের ওপর অমানুষিক লাঠিচার্জ করেছে। এতে অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়।
নেতাকর্মীরা বুধবার রাতের ওই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একইসাথে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং ইউএনও’র প্রত্যাহার দাবি করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, শোকের মাস বলে তারা ধৈর্য্য ধারণ করছেন। পরবর্তীতে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন এবং রাজনৈতিকভাবেই এই তাণ্ডবের জবাব দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোক দিবসে নগরে যেসব ব্যানার, বিলবোর্ড, লাগানো হয়েছিল, সেগুলো অপসারণ করতে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনও তার বাসভবন থেকে নিজে বের হয়ে কর্মীদের বাধা দেন। পরে কর্মচারীরা ব্যানার অপসারণের বিষয়টি ইউএনওকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমার কম্পাউন্ডে কোনো মেয়রগিরি চলবে না, তোমরা চলে যাও।’ পরে সেখানে থাকা কর্মচারীরা বিষয়টি মেয়রকে জানান।
গাজী নঈমুল হোসেন আরও বলেন, পরে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে বাবু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে যান। ইউএনও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ও হাসান মাহমুদকে নিজের বাসভবনে আটকে রাখেন।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন না। মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বুধবার রাতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বরিশাল নগরীতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাঠে থাকবে অতিরিক্ত ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকশ’ জনকে আসামি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
দুই মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি।