আমতলীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের স্বপ্নের আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিম্নমানের ইট এবং সিমেন্ট পরিমানে কম দেওয়ায় নির্মানের ২ মাসের মাথায় ঘরের পিলার ও দেয়াল ধসসহ মেঝের এবং দেয়ালের পলেস্তারার উঠে ঘরগুলো ব্যাহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কম মূল্যের স্টিল দ্বারা দরজা জানালা নির্মান করায় তা খুলে পরে যাচ্ছে।

জানাগেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রায়ণ প্রকল্পের অধীনে আমতলী উপজেলায় দুই ধাপে হতদরিদ্রদের ৪’শ ৫০ টি ঘর দেওয়া হয়।

ঘর নির্মানে সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাপক হারে লুট পাট করেছেন আমতলী ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, ইউএনওর ঠিক করা দালাল সুজন মুসুল্লী, হাবিব গাজী, কাওসার হাওলাদার, আনোয়ার মাষ্টার, মাহতাব প্যাদা, সবুজ খাঁন, জুয়েল রাঢ়ী, জহিরুল ইসলাম ও খলিল মুন্সি ঘর প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা আদায় করে এনামূর হক বাদশার মাধ্যমে ইউএনওর হাতে টাকা পৌছে দিতেন। যারা টাকা দিয়েছেন তারাই ঘর পেয়েছেন বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে।

প্রতিটি ঘর নির্মানে নি¤œমানের ইট খোয়া বালু থেকে শুরু করে সব কিছুতে খারাপ সামগ্রী দিয়েছেন। ৫০ বস্তা করে সিমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে ২৫-৩০ বস্তা সিমেন্ট দিয়ে ঘর নির্মান করায় অনেক জায়গায় তা ধসে পরেছে।

পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরের মেঝের পলেস্তারার উঠে গিয়ে এখই মাটির ঘরে পরিনত হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের দরজা জানালায় পাতলা লোহার সিট দেওয়ায় তা খুলে পরে গেছে।

ল্যাট্রিনে কম মূল্যের প্যান বসানোর ফলে তা ২ মাসের মাথায় এখন আর ব্যাহার করা যাচ্ছে না। আবার অনেক ঘরের ল্যাট্টিনের রিং বসানো হয়নি। ফলে ওইসব ঘরের বাসিন্দারা পায়খানা ব্যাহার করতে পারছে না।

ঘরের নকশা অনুযায়ী ঘর নির্মান না করে আকারে ছোট করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঘরের ইটের গাথুনির উপর রড সিমেন্টর ঢালাই দিয়ে লিনটেন দেওয়ার কথা থাকলেও তা করেননি।

ঘর নির্মানের শুরু থেকে অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। উপকার ভোগীদের তালিকা তৈরীসহ ঘরের মালামাল ক্রয়সহ সকল কিছইু করেছেন কমিটিকে অন্ধকারে রেখে।

কাগজে কলমে ৫ সদস্যের একটি কমিটি থাকলেও ইউএনও তার অস্থাভাজন আমতলীর স্থানীয় বাসিন্দা তার কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর কাম সিএ মো. এনামুল হক বাদশাকে নিয়ে অতিগোপনে সব কাজ করেছেন।

কমিটির সদস্য সদ্য বিদায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরিশালে বদলী কৃত নিশাত তামান্না জানান, ভূমিহীনদের জমির দলিল হস্তান্তর ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। আরেক সদস্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান বলেন, ঘরের তালিকা থেকে শুরু করে মালামাল ক্রয়সহ সকল কাজ ইউএনও তার আস্থাভাজন কর্মচারী এনামুল হক বাদশাকে নিয়ে করেছেন।

তিনি আরো বলেন, নির্মাণের শুরুতেই আমি ঘর নির্মাণে অনিয়মের প্রতিবাদ করেছিলাম এবং রেজুলেশনের সাদা খাতায় স্বাখর দিতে না চাইলে এতে ইউএনও আমাকে লাঞ্চিত করেছেন।

কমিটির আরেক সদস্য আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুরøাহ আল মামুন বলেন, ঘর নির্মান, তালিকা তৈরী এবং মালামাল ক্রয়সহ কোন বিষয় সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। বিভিন্ন কাজ আছে বলে সাদা খাতায় এনামুল হক বাদশাকে পাঠিয়ে আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন ইউএনও।

ঘরের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং বিচার দাবী করে হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের যুবলীগ নেতা কামাল রাঢ়ী বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান।

এ অভিযোগের পর ইউএনওর নির্দেশে তার সহযোগী এনামুল হক বাদশা, সুজন মুসুল্লী ও হাবীব গাজীর সহায়তায় যুবলীগ নেতা কামাল রাঢ়ীকে অপহরণ করে ইউএনও’র বাসায় নিয়ে আসে।

পরে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এ ঘটনায় আমতলী থানায় কামাল রাঢী একটি অপহরণ মামলা করেন।

ঘরের অনিয়ম এবং দুর্নীতির চিত্র সরেজমিন দেখার জন্য রবিবার সকালে এবং বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম ধাপের হস্তান্তর করা ঘরের দরজা জানালা খুলে পরে গেছে, কারো ঘরের মেঝের পলেস্তারা উঠে গেছে, আবার কারো ঘরের দেয়াল এবং পিলার ধসে পরেছে।

এর মধ্যেগুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের হামিদা বেগম পেয়েছেন আশ্রায়নের ঘর। ঘর নির্মাণের পাঁচ দিনের মাথায় বারান্দার পিলার ভেঙ্গে পরেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ইউএনও আসাদুজ্জামানের প্রতিনিধি সুজন মুসুল্লী পিলার নির্মাণ করে দেন।

গুলিশাখালী গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, ঘরের কাম হরার পাঁচ দিনের মধ্যেই পিলার ভাইঙ্গা গ্যাছে। সিমেন্ট ও বালু কোম দেয়। মুই মাল কোম দেওয়ার কথা কইছিলাম হেই লইগ্যা রাজমিস্ত্রি মোতালেব মোরে গালি গালাছ করেছে। ঘর পাওয়া একই গ্রামের রোজিনা আক্তার বলেন, ঘরের কাম না হইর‌্যা হালাইয়্যা রাখছে।

মোর স্বামীর কাছ থেকে এনামুল টাকা নেছে। রুপা আক্তার বলেন, ঘরের বারান্দার পিলার এ্যাকছের লড়ে। নাইয়্যাপাড়া গ্রামের বারেক মাদবর বলেন, মোরা কি কমু পঁচা ইট দিয়ে ঘর বানাইছে।

সিমেন্ট ও বালিু কম দিছে। একই ইউনিয়নের নাইয়্যাপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, মোর ঘরে ৩০ বস্তা সিমেন্ট আর ৫ হাজার ২০০ ইট দিয়া ঘর তুলেছে।

একই চিত্র আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নেও। ওই ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের আনোয়ার হাওলাদারের ঘর নির্মাণে কাটা লেন্টিন দেয়া হয়েছে। লেন্টিন না দেয়ায় বারান্দার পিলার ঠকঠক করে নড়ছে।

আনোয়ারের স্ত্রী শিরিনা বলেন, মোর স্বামীর কাছ থেকে চেয়ারম্যান ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ঘর দেছে। তিনি আরো বলেন, ঘর নির্মাণে কাওসার হাওলাদার ৫ হাজার ৩০০ ইট এবং ৩০ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছে। ওই ইট ও সিমেন্ট দিয়ে কাজ করছে।

হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের ১০ টি ঘর গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন ইউএনও আসাদুজ্জামান।

কিন্তু ঘর হস্তান্তরের দুই মাসের মাথায় ঘরের দরজা ও জানালা ভেঙ্গে গেছে। মেঝের পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে। কোন ঘরেই দেয়ালের উপর লিনটেন দেয়নি।

লিনটেন না দেয়ায় ঘর খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। প্রাণ নাশের ভয়ে অধিকাংশ ঘরে উপকারভোগীরা বসবাস করার সাহস পাচ্ছে না। টয়লেটে প্লাস্টিকেরকম মূল্যের প্যান বসানো হলেও রিং বসানো হয়নি। রিপন খলিফার স্ত্রী তানিয়া বলেন, ঘরে ফাটল ধরেছে। টয়লেটে রিং বসায়নি। মেঝের পলেস্তারার হাটার কারনে উঠে গেছে।

ঘরে বসবাস করতে ভয় লাগে। একই গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, ঘরের মধ্যে পায়খানা বসাইলেও রিং বসায়নি। একই গ্রামের কহিনুর বেগমের ঘরের দরজা ও জানালা ২ মাসের মাথায় খুলে পরে গেছে।

ঘর ও বারান্দার মেঝের পলেস্তারার উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। ভয়ে তিনি ঘরে বসবাস করছেন না। তারও ঘরের মধ্যে টয়লেট রিং বসানো হয়নি। হলদিয়া বাজার সংলগ্ন প্রতিবন্ধি দুলাল শরীফের ঘরের দরজা জানালা ইতিমধ্যে ভেঙ্গে গেছে।

টয়লেট নির্মাণ করেনি। ঘরের কাম হরার কালে জুয়েল রাঢ়ী টাহা নেছে। ১৫ দিন ৫ জন মানেরে খাওয়াইছি। জুয়েইল্লা কইছে না খাওয়াইলে ৭ আজার টাকা দেতে অইবে। মুই গরিব মানু টাহা পামু কই।

পরে ৫ জন মানেরে খাওয়াইছি। হ্যারপর ঘরের ৫ হাজার ২’শ ইট মোর টাইন্ন্যা আনা লাগছে। চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরর ব্যাপরীর ঘরের র‌্যাট্টিনের দেয়াল ২০ জুন রাতে নির্মানের সময় ধসে পরেছে। দেখা গেছে ধসে পরা দেয়ালে সিমেন্টের পরিমান অনেক কম। তাছাড়া তার দেয়ালের মাটির উপরে ফাটল ধরেছে।

অপর দিকে ঘর নির্মাণের তিন মাসের মাথায় তালতলী উপজেলার অংকুজান পাড়া গ্রামের আবুল কালাম মালের ঘরে ১২ স্থানে ফাটল ধরেছে। ঘরের সামনের পিলার ভেঙ্গে গেছে। ঘর হেলে পরেছে।

ঘরের মেঝের পলেস্তারা উঠে গেছে। আবুল কালাম মাল বলেন, ঘর নির্মাণের তিন মাসের মাথায় ঘরের সামনের পিলার ভেঙ্গে গেছে। ঘরে ১২ স্থানে ফাটল ধরেছে। ঘরে বসবাস করা বন্ধ করে দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রাজমিস্ত্রি বলেন, ঘর নির্মাণে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী দেয়া হয়নি। লিনটেন ছাড়াই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই ঘর বেশী দিন টিকবে কিনা সন্দেহ আছে।

তারা আরো বলেন, ঘর নির্মাণে এমন অনিয়মের কথা ইউএনওকে জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমাদের ধকম দিয়ে বলেন, যেভাবে করতে বলছি সেই ভাবে কর।

অপর দিকে ঘর নির্মাণের তিন মাসের মাথায় তালতলী উপজেলার অংকুজান পাড়া গ্রামের আবুল কালাম মালের ঘরে ১২ স্থানে ফাটল ধরেছে। ঘরের সামনের পিলার ভেঙ্গে গেছে। ঘর হেলে পরেছে।

ঘরের মেঝের পলেস্তারা উঠে গেছে। আবুল কালাম মাল বলেন, ঘর নির্মাণের তিন মাসের মাথায় ঘরের সামনের পিলার ভেঙ্গে গেছে। ঘরে ১২ স্থানে ফাটল ধরেছে। ঘরে বসবাস করা বন্ধ করে দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রাজমিস্ত্রি বলেন, ঘর নির্মাণে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী দেয়া হয়নি। লিনটেন ছাড়াই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই ঘর বেশী দিন টিকবে কিনা সন্দেহ আছে।

তারা আরো বলেন, ঘর নির্মাণে এমন অনিয়মের কথা ইউএনওকে জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমাদের ধকম দিয়ে বলেন, যেভাবে করতে বলছি সেই ভাবে কর।

ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান তালিকা তৈরি ও ঘর নির্মাণে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুসারে যথা নিয়মে সঠিক উপকরন ব্যাবহার করে ঘর নির্মান করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here