শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

বরিশালে ফোনে চাইলেন খাদ্য সহায়তা, পাচ্ছেন ঘরও

রিপোর্টারের নাম / ১৯৫ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : শনিবার, ৮ মে, ২০২১

বরিশাল সদরের কাশিপুর বিল্লু বাড়ি এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা মুকুল বেগম। সঠিক বয়স বলতে না পারলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছেন বলে জানান তিনি।

তার আনুমানিক বয়স হবে ষাট বছর। মুকুল বেগমের ছোট মেয়ে তারার বর্তমান বয়স (১৮)। এই মেয়ের যখন বয়স দেড়বছর তখন মুকুল বেগমের স্বামী দিনমজুর আকুব্বর খাঁ মৃত্যুবরণ করেন।

আকুব্বর খাঁ খুবই দরিদ্র হওয়ায় স্ত্রী আর সন্তানদের জন্য তেমন কিছু রেখে যেতে পারেননি।

বড় মেয়ে লতাকে (রুপবান) বিয়ে দেন মুকুল বেগম। তবে ৪ বছর পূর্বে সেই স্বপ্নের সংসারে বিচ্ছেদ ঘটলে লতা চলে আসেন মা ও বোনের কাছে।

এরপর তিনজনে মিলে বরিশাল সদরের কাশিপুর বিল্লু বাড়ি এলাকায় জনৈক এক ব্যক্তির জমিতে কোনোভাবে তৈরি একটি টিনের ঘরে বিনাভাড়ায় থাকতে শুরু করেন।

লতা অন্যের কাছ থেকে পাওয়া সেলাই মেশিনে কাজ করে তিনজনের সংসারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

তবে করোনা মহামারি শুরুর পর মাসহ দুইবোনের ওই সংসারে নেমে আসে নতুন এক অন্ধকার।

উপার্জন কমে যেতে থাকলে পরিবারে দেখা দেয় অভাব অনটন। আর কয়েকদিন ধরে দেখা দেয় খাদ্য সংকট।

সংকটকালীন এ পরিস্থিতিতে অন্যের কাছ থেকে শুনে নিজেদের মোবাইল দিয়ে লতা কল দেন ৩৩৩ নম্বরে।

২-৩ দিন আগে দেওয়া এই কলটির মাধ্যমে তারা খাদ্য সহায়তা চাইলে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে করোনাকালীন ঈদ উপহার নিয়ে হাজির হন লতাদের বাড়িতে।

 

যেখানে লতাদের অবস্থা দেখে, ঝুপড়ি ওই ঘরটিতে দাঁড়িয়েই তাদের সার্বিক বিষয়ে জানতে চান বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান।

এ সময় লতা ও তার মা মুকুল বেগমের বর্ণনায় বেড়িয়ে আসে তাদের তিন নারীর দারিদ্রতার কথা।

সঙ্গে সঙ্গে মো. মুনিবুর রহমান তাদের বসবাসের জন্য বিনামূল্যে একটি ঘর দেওয়ার কথা জানান।

মুহূর্তেই জ্বলে ভেজা ছল-ছল চোখে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পরেন মা মুকুল বেগম ও তার দুই মেয়ে।

বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই আমরা ৩৩৩ নম্বরে কল করে যারা খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন তাদের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে করোনাকালীন ঈদ উপহার নিয়ে হাজির হচ্ছি। যে উপহারের প্যাকেটে চালসহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্যসামগ্রী রয়েছে।

এই ধারাবাহিকাতয় বৃহস্পতিবার রাতেও আমরা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতে সাহায্যের আবেদনকারীদের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে শুরু করি।

মূল সড়কে গাড়ি রেখে মাটির পথ ধরে অন্ধকারে অনেকটা পথ পায়ে হেটে বিল্লুবাড়ি এলাকায় লতাদের বাড়িতে যাই।

সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তারা যে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরটিতে রয়েছেন সেটি তাদের নয়।

দরিদ্র হওয়ায় জমির মালিক বিনাভাড়ায় তাদের সেখানে থাকতে দিয়েছেন। আর লতা তার ছোট বোন এবং মাকে নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।

তাদের ঘরে কোন পুরুষ মানুষ নেই। লতা সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান কিন্তু করোনার কারণে সে কাজে ভাটা পড়ায় খাবারের সংকট দেখা দিলে ৩৩৩ নম্বর ফোন দেন।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তাদের বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মাণাধীন ঘরের একটি দেওয়ার কথা বলি। এতে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, তাদের যতদ্রুত সম্ভব ছবি, ভোটার কার্ডের কপি ও দরখাস্ত নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসতে বলেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশাকরি ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন ঘর পাবেন তারা ।

লতা বলেন, ‘৩৩৩ নম্বরে ফোন দিছি ভয়ে ভয়ে? দেওয়ার পরও ভাবতে ছেলাম কিছুই পামুনা মোনে হয়। কিন্তু সন্ধ্যায় যহন ছারেরা ফোন দিয়ে বাড়ির ঠিহানা জিগাইলো, তহন বুজঝি কিছু একটা পামু।

তাই রাস্তার মাথায় গিয়্যা দাঁড়াইয়া আছেলাম। সারেরা যে ঘর তামাইত আইবে, হ্যা তো বোঝতেই পারিনাই।

ঘরে আইয়া যহন আমাগো লগে কতা কইয়্যা বিভিন্ন জিনিস জানলো। তহন হঠাৎ একজন ছার বিনা পয়সায় ঘর দেওয়ার কতা কইলো। এত খুশির খবর মোগো লইগ্যা। ’

লতার মা মুকুল বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘বড় অভাবের মধ্যে দিন কাডাইতে আছেলাম।

সারেরা যে খাওনের প্যাকেট লইয়্যা আইছে, হেইডাই অনেক কিছু, এতেই মোরা অনেক খুশি হইছি।

আর এহন তো সরকার মোগো বিনা টাহায় জায়গা-ঘর দেবে বোলে। ভাইগ্যে থাকলে পামু, তয় পাওন লাগবো না, যে ছারে মোগো এ কথা খালি কইছে হ্যারে জন্য দোআ হরি। আল্লায় য্যান হ্যারে ভালো রাহে। ’

লতার ছোট বোন তারা বলেন, ‘জীবনে ভাবতেও পারি নাই খাওন লইয়্যা অফিসারের মতো মানুগুলো মোগো ঘরে আইবে। যেহানেই ঘর দেবে হ্যাহানে গিয়া মোরা থাকতে পারমু।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর