ক্যান্ডিতে হতাশার একটি দিন কাটল বোলারদের
সারাদিনে মাত্র একটি উইকেট। স্কোরকার্ডে এই দৃশ্য দেখলেই ফুটে ওঠে, কতটা হতাশার দিন কাটলো বোলারদের। টস হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে সারাদিন ৯০ ওভার বোলিং করে সাফল্য মাত্র একটি।
৬৪তম ওভারে শরিফুলের বলে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের উইকেটটি। এছাড়া ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের বোলারদের জন্য কাটলো পুরোপুরি হতাশার।
প্রথম দিন শেষে স্কোরবোর্ডে শ্রীলঙ্কার রান ১ উইকেট হারিয়ে ২৯১, লাহিরু থিরিমানে ১৩১ রান নিয়ে এবং ওসাদা ফার্নান্দো ব্যাট করছেন ৪০ রান নিয়ে। ১১৮ রান করে আউট হয়েছেন দিমুথ করুনারত্নে। একমাত্র উইকেটটি পেলেন অভিষিক্ত পেসার শরিফুল ইসলাম।
বোলারদের হতাশার দিন কাটলেও সবচেয়ে বেশি অসহায় ছিলেন বেচারা অধিনায়ক মুমিনুল হক। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তার হাতে থাকা ৫টি অস্ত্রের সবগুলোই বারবার ব্যবহার করলেন। শুধুমাত্র একটু সাফল্যের আশায়। সবেধন নিলমনি’র মত একটিমাত্র সাফল্য এনে দিয়েছেন কেবল অভিষিক্ত পেসার শরিফুল।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর দুই লঙ্কান ওপেনার যেভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন, তাতে করে বড় দুঃশ্চিন্তাই ভর করেছিল বাংলাদেশ শিবিরের ওপর। শেষ পর্যন্ত ২০৯ রানের জুটি গড়ার পর অবশেষে তাতে ভাঙন ধরালেন অভিষিক্ত পেসার শরিফুল ইসলাম।
আগের ইনিংসে ২৪৪ রান করা দিমুথ করুনারত্নে এই টেস্টেও করলেন সেঞ্চুরি। তাকে ১১৮ রানে ফিরিয়েছেন শরিফুল। ইনিংসের ৬৪তম ওভারের প্রথম বলটি ছিল অফ স্ট্যাম্পের হালকা বাইরে।
করুনারত্নে চেষ্টা করেছিলেন অফসাইডে স্কয়ার কাট করবেন। কিন্তু ব্যার্থ হলেন। বল ব্যাটের কানায় চুমা দিয়ে গিয়ে জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।
আউট হওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক। তিনি যে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন, তা বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র দুই ইনিংস ব্যাট করেই।
শুধু করুনারত্নেই নয়, ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলেন লাহিরু থিরিমানেও। শরিফুল করুনারত্নেকে ফেরালেও থিরিমানে ঠিকই ব্যাট করে যাচ্ছেন।
দিনের প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না পেলেও রানের গতিটা থামিয়ে রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে খেলা ২৭ ওভারে ৬৬ রানের বেশি করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের ২০তম ওভারে ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। না হয় সেশনটা লঙ্কানদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারত বাংলাদেশ।
কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে আর কোনো সুযোগই দেননি দুই লঙ্কান ওপেনার। মধ্যাহ্ন বিরতির পর খেলতে নেমে ওভারপ্রতি প্রায় চার (৩.৯৪) গড়ে ৩১ ওভারে ১২২ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী জুটিতে টানা তিন ম্যাচে শতরান যোগ করেছেন করুনারাত্নে ও থিরিমান্নে।
ম্যাচে বাংলাদেশের ৯৭তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিজাত টেস্ট ফরম্যাটে নাম লিখিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী শরিফুল ইসলাম। ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরীর জায়গায় নেয়া হয়েছে তাকে। বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তন এই একটিই। অভিষেক হয়েছে লঙ্কান প্রবীন জয়াবিক্রমেরও।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার বদলে গেল পুরো চিত্র। টস জিতেছেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে, জানিয়েছেন আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। টসের সময় মুমিনুল হক জানিয়েছেন, টস জিতলে তিনিও আগে ব্যাটিং নিতেন।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে ইনিংসের নবম ওভারের মধ্যে চার বোলার ব্যবহার করে ফেলেন মুমিনুল। আবার পুরো সেশনেই তিনি ব্যবহার করেননি দলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তাইজুল ইসলামকে। পঞ্চম ওভারেই আক্রমণে আনেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে, নবম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ের সুযোগ পান শরিফুল।
এত বোলিং পরিবর্তনের সুফল পায়নি বাংলাদেশ। নিষ্প্রাণ উইকেটে লাইন-লেন্থ বজায় রেখে রান কমিয়ে রাখার কাজটা ঠিকঠাকই করেছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, আবু জায়েদরা। কিন্তু মেলেনি উইকেটের দেখা। অবশ্য ফিল্ডারদের সহায়তা পেলে দুই ওপেনারকেই ফেরাতে পারতেন তাসকিন।
ইনিংসের ২০তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে থাকা অবস্থায় স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন করুনারাত্নে। কাঁধ সমান উচ্চতায় আসা বলটি হাতে নিয়েও ধরে রাখতে পারেননি শান্ত। ফলে জীবন পান লঙ্কান অধিনায়ক। এছাড়া তাসকিনের ওভারেই মুমিনুল ও মিরাজের খুব কাছ দিয়ে চলে যায় দুইটি ক্যাচ।
প্রথম সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত ৩২ রানে অপরাজিত থাকা করুনারান্তে, অষ্টম রান নেয়ার সময় পূরণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫ হাজার রান। শ্রীলঙ্কার দশম এবং বিশ্বের ৯৭তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৫ হাজারের মাইলফলকে নাম লেখান তিনি।
পরে দ্বিতীয় সেশনে স্পিনের দিকে মনোযোগ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক অধিনায়ক। প্রথম সেশনের ২৭ ওভারের মধ্যে শুধুমাত্র ৬ ওভার করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বোলিংয়ের ডাকই পড়েনি তাইজুল ইসলামের। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের ৩১ ওভারের মধ্যে এ দুই স্পিনারই করেন ২১ ওভার।
মূলত স্পিনার পেয়েই স্বচ্ছন্দে রান করতে থাকেন লঙ্কান ওপেনাররা। এই সেশনে তাইজুল ও মিরাজের ২১ ওভার থেকে এসেছে ৬৬ রান। অবশ্য রান বিলিয়েছেন পেসাররাও। দ্বিতীয় সেশনে শরিফুল ৩, তাসকিন ৩ ও আবু জায়েদ ৪ ওভারে মোট খরচ করেছেন ৫৬ রান। যা ওভারপ্রতি ৫.৬০!
সাবলীল ব্যাটিংয়ে ইনিংসের ৫৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ২ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন করুনারাত্নে। তার ইনিংসটি সাজানো ১৩ চারের মারে। অন্যদিকে ১৩১ রানে অপরাজিত থাকা থিরিমান্নে হাঁকিয়েছেন ১৪টি চার। দুই সেশন শেষে আক্ষেপ হয়ে থাকছে নাজমুল শান্তর হাত থেকে পড়া সেই ক্যাচটিই।