শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বরিশালের নতুন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম সুমন বরিশালের নতুন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান র‌্যাঙ্কিংয়ে এগোতে ক্যারিবীয় সিরিজে বাংলাদেশকে যা করতে হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ভাঙচুর-আগুন, ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারীরা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন যেসব নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ গণঅভ্যুত্থানের ফসল ‘জুলাই সনদ’, নবজন্মের পথে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস ক্যান্সার দূরে রাখার ৬ উপায়

মেডিকেলে ভর্তিতে দেশসেরা হওয়ার গল্প জানালেন মিশোরী

রিপোর্টারের নাম / ১৯৩ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১

দরিদ্র পরিবারে খুব সাধারণভাবে বেড়ে ওঠা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার স্বল্প আয়ে আর্থিক দৈন্যে কষ্ট হলেও ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলেন। সব সময় ভালো ফল করলেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি যে সারাদেশে প্রথম হবেন তা ধারণা করেনি কেউ। বলছিলাম পাবনার রাধানগরের নারায়ণপুর মহল্লার মেয়ে মিশোরী মুনমুনের কথা।

সবাইকে তাক লাগিয়ে এমবিবিএস ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মিশোরী মুনমুন দেশসেরা হয়েছেন। তার এই সাফল্যে এলাকায় বইছে উৎসবের আমেজ। বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন মিশোরী। বাড়িতে ছুটে আসছেন গর্বিত শিক্ষকরাও।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবা-মা ও তিন বোনের পরিবারে মিশোরী মুনমুন সবার ছোট। শহরের ইছামতি সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। জেএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণের পর পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন মিশোরী মুনমুন। করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গত কয়েকমাস নিজ বাড়িতেই রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন তিনি। তার সাফল্যে খুশি পরিবারের সবাই।

মিশোরী মুনমুনের সাফল্যের গল্প শুনতে রোববার (০৪ এপ্রিল) রাতে তার বাড়িতে পৌঁছায় সংবাদকর্মীরা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা ফলাফলের পেছনের গল্প জানিয়েছেন তিনি।

মিশোরী মুনমুন বলেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে পড়াশুনা শুরু করতাম। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের জন্য। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে অসহায় ও চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা আমার সাফল্য অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও ভালোবাসা আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস যুগিয়েছে। আমি সবার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

মফস্বল শহরে থেকেও এতো ভালো ফলাফল কীভাবে অর্জন করলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে মিশোরী মুনমুন বলেন, মফস্বল হোক আর শহরে হোক লক্ষ্য স্থীর করে সঠিক পরিকল্পনায় পড়াশুনা করলে সফলতা অর্জন সম্ভব। আমার অনেক বান্ধবী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়নি। তারা হয়তো সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগায়নি।

মিশোরী মুনমুনের বাবা মো. আব্দুল কাইয়ুম পাবনা শহরতলীর রাধানগর নারায়ণপুর মহল্লার বাসিন্দা। তিনি পাবনার একটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। স্বল্প বেতনে কষ্ট হলেও তিন মেয়েকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে কোনো কার্পণ্য করেননি।

আব্দুল কাইয়ুম বলেন, হাজারো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। মেয়েটি সারাদেশে প্রথম হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।

মিশোরী মুনমুনের মা মুসলিমা বেগম বলেন, আজকের এইদিনের মত আনন্দ আমার জীবনে কোনোদিন আসেনি। খুবই খুশি লাগছে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

তিনি বলেন, মিশোরী ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। খুব বেশি সময় না পড়লেও যতোটুকু পড়তো ততোটুকু মনোযোগ দিয়েই পড়তো। যার ফলে ক্লাসে বরাবরই ভালো রেজাল্ট ছিল তার। ক্লাস এইট, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে মিশোরী।

মুসলিমা বেগম বলেন, এক সময় মানুষ আমার মাঝে হতাশার বীজ বপন করে। মেয়ের পড়াশুনা নিয়ে হতাশায় চিন্তায় দিন কাটত। প্রতিবেশীরা অনেকেই বলতো মেয়েকে কেন এত পড়াতে হবে, দ্রুত বিয়ে দিয়ে দাও। মেয়ের জন্য কটু কথাও শুনতে হয়েছে। আমার মেয়ে আজ মেডিকেল পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছে, এটা গর্বের।

প্রতিবেশী পাবনা জেলা স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মোস্তফা বলেন, মিশোরী মুনমুন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। আমি তার শিক্ষক হিসেবে গর্ববোধ করি। এ জয় পুরো পাবনাবাসীর। বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

অন্য ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাইকে বলব তোমরা মিশোরী মুনমুনকে অনুসরণ করো, তার থেকে শিক্ষা নাও। সে মফস্বল শহরের মেয়ে হয়ে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম হয়েছে।

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, মিশোরী মুনমুনের সাফল্যে আমরা খুবই গর্ববোধ করছি। শিক্ষকরা সব সময় তার খোঁজখবর নিয়েছেন। মেয়েটি আমাদের কলেজের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার (০৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৩৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন পাবনার মেয়ে মিশোরী মুনমুন। তার রোল নম্বর ২৫০০২৩৮। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি ৮৭.২৫ নম্বর পেয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর