৫৮৮৩ কোটি খরচে গ্রামে ব্রডব্যান্ড নেয়ার প্রকল্প প্রত্যাহার
প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণসহ গ্রামপর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি একনেকে উঠার আগেই প্রত্যাহার করে নেয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। ফলে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়নি।
মঙ্গলবার একনেক সভায় মোট ৬টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। একনেক সভা শেষে এ দিন দুপুরে রাজধানীর এনইসিতে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, ‘আজকে মোট ৭টি প্রকল্প একনেকে তোলার কথা ছিল। কিন্তু একটি প্রকল্প গতকালই আইসিটি ডিভিশন প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে তারা সেটি পেশ করবে। মূলত আজকে ছয়টি প্রকল্প ছিল এবং ছয়টিই পাস হয়েছে।’
‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ নামের প্রকল্পটি আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে আইসিটি অধিদফতর। প্রকল্পের মেয়াদ প্রস্তাব করা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার নিজস্ব তফবিল থেকে দেবে ২ হাজার ৫০৫ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা আর চীন সরকারের কাছ থেকে ঋণ করবে ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্র্যান্ড অ্যান্ড ইউজার কানেক্টিভিটি স্থাপন, ১০ হাজারটি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, সেন্ট্রাল ক্লাউড প্লাটফর্ম ও ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে আইটি অবকাঠামোসহ লোকার এরিয়া নেটওয়ার্ক, নেটওয়ার্ক অপারেশন্স সেন্টার, প্রশিক্ষণ সুবিধাদি, ৫৫৫টি ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার, মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন করা।
আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসট্যান্স লার্নিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধা সম্বলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন, সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিকস বাস্তবায়নের জন্য সিআরভিএস সেন্টার আইএসডিপি সার্ভার স্থাপন করা। মাঠ পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভারি ডিভাইস বিতরণ করা।
১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন স্থাপন, ৪৯২টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, একটি ২১তলা বিশিষ্ট ডিওআইসিটি টাওয়ার নির্মাণ, ৪৯১টি উপজেলা শেয়ারড আইসিটি অপারেশন সেন্টারের জন্য উপজেলা বিল্ডিংয়ের এক তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশনের আওতায় মাঠ পর্যায়ে জরিপ এবং ২০ হাজার জন কৃষককে স্মার্ট সেন্সর ডিভাইস প্রদান করা।
৬টি (২টি জিপ, ২টি মাইক্রোবাস, ২টি ডাবল কেবিন পিকআপ) মোটরযান কেনা, ২৮ ক্যাটাগরির পরামর্শক সেবা কেনা, কম্পিউটার এক্সেসরিজ এবং সফটওয়্যার সংগ্রহ করা, ১০২টি অফিস ইক্যুপমেন্ট, ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২টি ফার্নিচার সংগ্রহ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ (বৈদেশিক ভেন্যু- ৪০ জন এবং বাংলাদেশ ভেন্যু- ৩ হাজার ৩৩৫ জন), ১৬ হাজার ৮২১ জনের স্থানীয় প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৯ জন জনবল নিয়োগ ইত্যাদি।
প্রকল্পটি একনেককে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেছিলেন, ‘প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো সরকারের সেবাগুলোকে ই-সেবায় রূপান্তর করে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া। তাছাড়া ডিজিটাল শিক্ষার সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যকরণের মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।
ডিজিটাল বিভক্তি দূর করা, সব পর্যায়ে আইসিটির ব্যবহার সহজ করা, দেশব্যাপি আইসিটির সহজগম্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শতভাগ ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন রেট নিশ্চিত করা। সরকারের সব পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিত করা, আইসিটির নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা। এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বিধায় সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’