মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মানবতার মা, উনি সকলের কথা চিন্তা করেন-পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম-এমপি বলেছেন, আমি বেশি লম্বা বক্তৃতা দেই না, কারণ আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। সেজন্য আমি ছোট করে কথা বলি আর কাজের কথা বলি। কারণ আমি সেইরকম রাজনীতিবিদও না , আমি বঙ্গবন্ধুর সময়ে ছয়দফা আন্দোলন করেছি, ওনার ডাকে আমি সেনাবাহিনীতে গিয়েছিলাম। তারপরে দীর্ঘসময় সেনাবাহিনীতে চাকুরি করার পর আমি কর্নেল হিসেবে অবসর গ্রহন করি। এরপর ২০০৮ সালে আমি বরিশাল থেকে নির্বাচন করি। সেসময় আমি মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আমি হেরে গেছিলাম। সেটাও হয়তো দলীয় কোন কারণে, অনেকে পছন্দ করেননি আমাকে হারিয়ে দিয়েছে। আমি কিন্তু হারিনি, আর এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানতেন। এরপর এবারে আবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনায়ন দিয়েছেন, আর আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত করেছেন তিনি।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার চড়বাড়িয়া ইউনিয়নে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতররণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি প্রভাবশালী মন্ত্রী নই, আমি মন্ত্রীসভার একজন সদস্য। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। সেজন্য আমি বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়াই। কারণ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, দেশের সবজায়গাতেই নদী ভাঙ্গণ। এমন কোন জায়গা নেই, যেখানে গ্রাম-গঞ্জের ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয় না। এজন্য আমাকে দেশের একপ্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রাতে ছুটে বেড়াতে হয়, তারপরও আপনারা যেহেতু আমাকে ভোট দিয়ে বানিয়েছেন তাই আমি চেষ্টাকরি প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বরিশালে থাকতে। আর আমার মনটাও বরিশালে পড়ে থাকে।
তিনি বলেন, মাত্র দুই বছর হয়েছে আমি সংসদ সদস্য হয়েছি। এরআগে কিন্তু গত ২০ বা ২৫ বছর যারা সংসদ সদস্য ছিলেন তারা আপনাদের এলাকার জন্য কি করেছেন। আপনারা আজ বলছেন, রাস্তাঘাট ভাঙ্গা, রাস্তাঘাট নেই, মসজিদ-মাদ্রাসা নেই। ভোট দেয়ার অধিকার আপনাদের। একবার ভোট দিলেন কিন্তু যদি সে কাজ না করে তাহলে তাকে দ্বিতীয়বার ভোট দেয়ার কথা না। কিন্তু আপনারা পর পর ভোট দিতে দিতে একাধারে চার চার বার সংসদ সদস্য করেছেন। এখন টিআর-কাবিখার টাকা যে কোথায় গেছে আল্লাহ জানে। বিগত ২০ বছর বিএনপির যিনি সংসদ সদস্য ছিলেন, তিনি কোন কাজই করেননি। যারজন্য আপনাদের এলাকায় কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।
তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনাদের আশ্চস্ত করতে চাই আমি চুরি করিনা। আমি গম চুরি করিনা, টিআর-কাবিখার টাকা পকেটে ঢুকাই না। এগুলো যে কাজের জন্য দেয়া হয় সে কাজেই ব্যবহার করি। আমি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী, আমার হাতে হাজার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না আমি কোন টেন্ডারবাজি করেছি বা কোথাও দিয়ে টাকা তসরফ করেছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমি মন্ত্রী হই আর যাই হই, মারা গেলে সাড়ে ৩ হাত মাটির ভেতর থাকতে হবে। মন্ত্রীর জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি সাড়ে ৫ হাত হয় না। তাই এসসমস্ত চুরি-চামারি থেকে নিজেকে দুরে রাখার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের খেদমত করা আমার দায়িত্ব-কর্তব্য। এজন্যই আপনাদের সমস্যাগুলো আমার জানা আছে। এই সদর উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া আছে। যারমধ্যে ৬৪ রাস্তার প্রকল্প নেয়া আছে, যার অনুমোদন হলে সদর উপজেলার সকল রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। তালতলী বাজারে একটা মডেল মসজিদ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্ব উদ্যোগে এটাসহ গোটা বাংলাদেশে ৪৬০ টি মডেল মসজিদ বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ হবে। যারা হজ করতে যাবেন তাদের এখানে প্রশিক্ষন দেয়া হবে, লাইব্রেরি থাকবে, কোরআন শিক্ষা দেয়া হবে, একসাথে অনেকে লোকের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নেহালগঞ্জে ব্রীজের কাজের উদ্বোধন খুব শীঘ্রই করা হবে। যেটা হলে লোকজনের যাতায়াতের সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, আমার চিন্তাধারা হলো জনগনের খেদমত করা। আমি চাই এমন লোক চেয়ারম্যান-মেম্বার হোক যাদের দিয়ে সততার সহিত আপনাদের খেদমত করাতে পারবো। আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে। আর আপনারা যদি চান এলাকার উন্নতি হোক, এলাকার পরিবেশটা ভালো থাকুক, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি যে ব্যক্তির জন্য আবেদন জানাবো এবং প্রধানমন্ত্রী যদি তাকে মনোনায়ন দিয়ে দেন তাহলে তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। তাহলেই আমার হাত শক্তিশালী হবে। আর আমার হাত শক্তিশালী হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্তিশালী হবে।
তিনি বলেন, প্রকল্প পাশ করিয়ে আনতে সময় লাগে। আমার মাত্র ২ বছর হয়েছে, চরবাড়িয়ার যে সব সমস্যার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর সমাধান করা হবে, এজন্য আমাকে একটু সময় দিন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন, যে আমি কমিটমেন্ট করে যাই সেগুলো অবশ্যই হবে। আর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে আমার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আর হাতকে শক্তিশালী করতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনায়ন দিবে তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। আর যদি আপনারা ভোট দিয়ে তাদের জয়যুক্ত করতে না পারেন তাহলে পূর্বে যেভাবে অবহেলিত ছিলো ভবিষ্যতেও আপনাদের এলাকা অবহেলিত থাকবে।
তিনি বলেন, ১০ বছর আগেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতো ভালো ছিলো না। কর্নেল হিসেবে আমার শেষ বেতন ছিলো ১৭ হাজার টাকা আর এখন পুলিশের একজন কনেস্টাবলই ১৫ হাজার টাকা বেতন পায়। অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের কথা চিন্তা করেন বলেই সবার বেতন-ভাতা বাড়িয়েছেন। তার ইচ্ছা সবাই সততার সাথে কাজ করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মানবতার মা, উনি সকলের কথা চিন্তা করেন বিধায় একসাথে গৃহহীনদের মাঝে ৭০ হাজার ঘর একদিনে দিয়েছেন। করোনার মধ্যে তিনি দুহাত ভরে সাধারণ মানুষের জন্য প্রনোদনা দিয়েছেন। আবার ইউরোপ, আমেরিকার সাথে আমরাও একই সময়ে ভ্যাকসিন দিতে পারছি প্রধামন্ত্রীর জন্য। অনেক দেশে এখনো ভ্যাকসিনের কোন খবর নেই। তিনি আপনাদের কথা ভাবেন দেখেই এ সব উদ্যোগ নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোআ করবেন, তিনি যতদিন সরকার প্রধান আছেন ততদিন বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি পদ্মাসেতু হবে। আজ পদ্মাসেতু হচ্ছে, পায়রা বন্দর হচ্ছে। ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন ও চারলেনের রাস্তা হবে। এগুলো হলে বিভাগীয় শহর বরিশালে বিদেশীরা এসে অফিস করবে। জমির দাম বাড়বে। আর অফিস আদালত হলে আপনাদের সন্তানরা চাকুরি পাবে। কিন্তু আমার অনুরোধে আপনার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তা না হলে অফিস আদালত হলেও চাকুরি পাবে না। আর লেখাপড়া না করলে চাকুরি দেয়া সম্ভব হবে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া না করালে চাকুরি দিতে আমিও পারবো না, তখন দোষ আমার দিতে পারবেন না।
সে-সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন, জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জোবায়ের আব্দুল্লাহ জিন্নাহ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, চরবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইতালি শহিদ, বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি /সাধারণ সম্পাদক সহ সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।