ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়
বাংলাদেশ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোয়াড ঘোষণার পরই আভাস পাওয়া গিয়েছিল ফলাফলের ব্যাপারে। দেখার বিষয় ছিল, মাঠে ঠিক কতটা দাপুটে জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ১২২ রানে অলআউট করে স্বাগতিকরা জিতেছিল ৬ উইকেটে। আজ (শুক্রবার) দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ১৪৮ রান। যার জবাবে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ফিফটির সুবাদে ৩ উইকেট হারিয়ে, ৭ উইকেটের ব্যবধানে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
প্রথমে ২০১৮ সালের জুলাইতে প্রতিপক্ষের মাটিতে ২-১, একই বছর ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে ২-১, এবার ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত হয়ে গেল সিরিজের ট্রফি; সবমিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের হ্যাটট্রিক করে ফেলল বাংলাদেশ দল। এবং সবমিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পঞ্চম সিরিজ জয়টি টাইগারদের। জিম্বাবুয়ের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে কোনো দেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের হ্যাটট্রিক হলো টাইগারদের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ টানা ৬টি সিরিজ জেতার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের।
১৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন দাস। দৃষ্টিনন্দন কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনি সাজঘরে ফিরে যান ষষ্ঠ ওভারে। আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে করেন ২২ রান। আরও একবার হতাশ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ১৭ রান। তিনি জেসন মোহাম্মদের বলে সহজ ক্যাচ তুলে দেন জর্ন ওটলের হাতে।
একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন অধিনায়ক তামিম। দলকে ১০০ রান পার করিয়ে আউট হন তিনি। তার আগেই তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৮তম ওয়ানডে ফিফটি। তবে এরপর আর টিকতে পারেননি। তিন চার ও এক ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ৭৫ বলে ৫০ রান করেন তামিম। অধিনায়ক ফিফটি করলেও সাকিব অপরাজিত ছিলেন ৪৩ রানে। মুশফিকুর রহীমের (৯) সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন সাকিব।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আজও ইতিবাচক শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রুবেল হোসেনের করা প্রথম বলেই দারুণ টাইমিংয়ে বাউন্ডারি মারেন তিনি। কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও ফিরে যান খানিক পরেই। আগের ম্যাচের মতো আজও তিনি আউট হয়েছেন মোস্তাফিজের বোলিংয়ে, তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বলটি সহজেই তালুবন্দী করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। অ্যামব্রিস করতে পেরেছেন ১৫ বলে ৬ রান।
দলীয় ১০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারানোর পর অভিষিক্ত জর্ন ওটলেকে নিয়ে প্রতিরোধের আভাস দেন জশুয়া ডা সিলভা। দুজন মিলে যোগ করেন ২৬ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে হাসান মাহমুদকে অসাধারণ এক পুল শটে ছক্কা হাঁকান ওটলে। তবে স্পিন আসতেই ভাঙে জশুয়া-ওটলের প্রতিরোধ। এক ওভারেই দুজনকে ফেরান মিরাজ।
দশম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া সাফল্যের দেখা পান অফস্পিনার মিরাজ। ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট মিডঅফে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ৪৪ বলে ২৪ রান করা অভিষিক্ত ওটলে। একই ওভারের চতুর্থ বলে ভুল লাইনে ডিফেন্ড করে সোজা বোল্ড হয়ে যান জশুয়া, তার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ৫ রান।
মিরাজের জোড়া উইকেটের পরের ওভারেই ডাকা হয় আরেক স্পিনার সাকিব আল হাসানকে। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে আন্দ্রে ম্যাকার্থিকে আর্মারে বোকা বানান সাকিব। স্লগ করতে গিয়ে সোজা বোল্ড হন ৭ বলে ৩ রান করা ম্যাকার্থি। উইন্ডিজের মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে ১৮তম ওভারের রানআউট। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ শর্ট স্কয়ার লেগে ঠেলেই দ্রুত রানের জন্য দৌড় শুরু করেন। দারুণ থ্রোতে স্ট্রাইকার এন্ডে মায়ারসের বিদায়ঘণ্টা বাজান নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের ম্যাচে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করা মায়ারস এবার ফেরেন শূন্য রানে।
মাত্র ৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ষষ্ঠ উইকেটে ইনিংস সর্বোচ্চ ২৬ রানের জুটি গড়েন জেসন মোহাম্মদ ও এনক্রুমাহ বোনার। নিজের প্রথম স্পেল থানা প্রান্ত থেকে করে এক উইকেট নেয়ার পর ২৫তম ওভারে মিডিয়া প্রান্তে বোলিং শুরু করেন সাকিব। সেই ওভারের শেষ বলেই ভাঙেন জেসন-বোনার জুটি। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ১১ রান করা ক্যারিবীয় অধিনায়ক।
এর পরের ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পান আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া হাসান মাহমুদ। তার নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন ইতিবাচক খেলে ২৫ বলে ২০ রান করা বোনার, মাত্র ৭১ রানে ঘটে উইন্ডিজের সপ্তম উইকেটের পতন। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তাদের বিপদ আরও বাড়ান মেহেদি মিরাজ। ইনিংসের ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ২ রান করা রেইফারকে। আম্পায়ার আউট দেননি সেটি, রিভিউ নিয়ে উইকেট পায় বাংলাদেশ।
দলীয় নব্বইয়ের আগেই অষ্টম উইকেট হারানোর পর পাল্টা আক্রমণ করেন রভম্যান পাওয়েল ও আলঝারি জোসেফ। দুই স্পিনার মেহেদি মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন তারা। তাদের জুটিতে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩২ রান। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে আলঝারিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। শর্ট গালিতে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন ২১ বলে ১৭ রান করা আলঝারি।
শেষ উইকেট জুটি ভাঙতে ৬.১ ওভার বোলিং করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নিজের শেষ ওভার করতে এসে চতুর্থ বলে স্ট্যাম্পিং করেন ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার রভম্যান পাওয়েলকে। এগিয়ে এসে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নিজের উইকেট হারান ৬৬ বলে ৪১ রান করা পাওয়েল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থামে ১৪৮ রানে।
সবমিলিয়ে ৯.৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন মিরাজ। ওয়ানডেতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া ২টি করে উইকেট গেছে সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের ঝুলিতে।