রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

নামের মিল থাকায় অন্যের সাজা ভোগ করছেন নিরপরাধ বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান

রিপোর্টারের নাম / ৯৭ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

গলাচিপা প্রতিনিধি ॥ নামের মিল থাকায় ৮০ বছরের নিরপরাধ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নামে এক বৃদ্ধকে জেল খাটতে হচ্ছে।

 

 

গলাচিপা শহরের কলেজ পাড়ার বনানী এলাকার ওই বৃদ্ধকে ৪ অক্টোবর একটি চেক ডিজ অনার মামলায় গলাচিপা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জেল খানায় পাঠিয়ে দেয়।

 

২০১৮ সালের ২৫ মার্চ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাক দায়েরকৃত একটি মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা দায়রা জজ আদালত মো. হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে এক বছরের কারাদ- ও ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার অর্থ দ-ের নির্দেশ দেয়।

 

 

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের ‘নাহার গার্মেন্টস‘র মালিক মো. হাবিবুর রহমান, পিতা- নূর মোহাম্মাদ মাষ্টার, মুজিব নগর রোড, গলাচিপা পৌর শহরের বাসিন্দা ৬ আগস্ট ২০১২ তারিখ ব্র্যাক থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।

 

 

এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব একাউন্টের (হিসাব নং ২২০০) ঋণের সমপিরমান অর্থের একটি চেক জমা দেন।

 

 

কিন্তু তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ১০এপ্রিল ২০১৩ ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজ অনার হয়।

 

 

পরে ব্রাক কর্তৃপক্ষ ২ মে ২০১৩ তারিখে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি ব্য্রাক থেকে ঋণ গ্রহণ করেননি মর্মে ১৯জুন ২০১৩ তারিখ লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ঋণ গ্রহিতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

 

 

ওই মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন।

 

 

রায়ে মো. হাবিবুর রহমানকে ১ বছরের কারাদন্ড ও ঋণের দ্বিগুন অর্থ অর্থাৎ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের আদেশ দেন।

 

 

রায়ের দিন ঋণ গ্রহিতা মো.হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

 

ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার সহকারি পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়।

 

সাজাভোগকরা হাবিবুর রহমানের পিতার নাম নূর মোহাম্মাদ পন্ডিত।

 

 

এদিকে ঋণ গ্রহিতা হাবিবুর রহমান প্রায় ৫ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে শহরের মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তিনি ব্যবসার ধরণ পাল্টে এখন মুদি-মনোহরি ব্যবসা শুরু করেন।

 

 

এ ব্যাপারে জেলে থাকা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আবু সালেহ বলেন, “আমার বাবা সদর রোডে কোন দিন ব্যবসা করেননি আর আমরা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও গ্রহন করিনি। আমারা দুই ভাই ঢাকায় গার্মেন্টেস‘এ চাকুরি করি। বাবা-মার ভরণ-পোষনের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাই। তা দিয়ে তারা বসবাস করে। পুলিশকে বিষয়টি বলা হয়েছিল কিন্তু তারা শোনেনি।:

 

 

গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বলেন,“আদালত থেকে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে আমরা তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাই। কিন্তু পরে জানতে পারি তিনি প্রকৃত আসামি নন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।

 

 

 

গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন,“ মামলার প্রকৃত আসামী নুর মোহাম্মদ মাস্টারের ছেলে মো. হাবিবুর রহমানকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামির নাম ও পিতার নামে মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেফতার করে।

 

 

বিষয়টি আমরা সংশোধন করে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রুত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর