বরিশালে আইন লঙ্ঘন করে বিক্রি হচ্ছে গুঁড়ো দুধ, ০২ ফার্মেসীতে জরিমানা
বরিশাল নগরীর দোকানগুলোতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য। ফার্মেসী থেকে শুরু করে স্টেশনারীর দোকানে হাত বাড়ালেই মিলছে বিক্রি নিষিদ্ধ এসব কৌটাজাত গুঁড়ো দুধ। অথচ আইনে রয়েছে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প এসব শিশু খাদ্য প্রদর্শনও করা যাবে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য ও এর ব্যবহার সংক্রান্ত আইন।
যদিও হঠাৎ করেই সোমবার (১৪ অক্টোবর) বরিশাল নগরীর কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শিশু খাদ্যের উপর অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। এসময় মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য কৌটার দুধ প্রকাশ্যে প্রদর্শন করে বিক্রির অপরাধে দুই ফার্মেসী কর্তৃপক্ষকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থদন্ড দিয়েছেন তারা। জরিমানা দেয়া প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- নগরীর সদর রোডস্থ জেলখানার মোড় সংলগ্ন বিষ্ণুপ্রিয়া ফার্মেসী ও লাইফ মেডিসিন। দুই প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
থানা পুলিশ, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় দুটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মনিরা খাতুন। মোবাইল কোর্টে প্রসিকিউশন করেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা থেকে আসা বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার খাদিজাতুল কুবরা।
মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্চামাদি (বিপণন-নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী বিভিন্ন কোম্পানি উদপাদিত কৌটাজাত দুধ প্রকাশে বিক্রি এবং প্রদর্শন আইনত দন্ডনিয়। এমনকি কোন চিকিৎসক অকারনে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প এই শিশু খাদ্য রোগী বা তার স্বজনদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে লিখতে পারবে না। যদিও বিশেষ ক্ষেত্রে লেখার অনুমতি থাকলেও ব্যবস্থাপত্রে লেখার কারণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
আইনে এমনটি থাকলেও বাস্তব চিত্র পুরই ভিন্ন। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় প্রকাশেই বিক্রি হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য। শুধু তাই নয়, নগরীর প্রায় প্রতিটি ওষুধের ফার্মেসী, স্টেশনারী, মনোহরী এমনকি মুদি দোকানেও প্রকাশ্যে গুড়া দুধ প্রদর্শন করা হচ্ছে বিক্রির জন্য।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল হক বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশু খাদ্য প্রদর্শন বা বিক্রি করতে পারবে না। বিশেষ করে ফার্মেসীগুলোতে গুড়া দুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও মডেল ফার্মেসী হওয়ার পরে এই আইন কিছুটা শীথিল হয়েছে। মডেল ফার্মেসীতে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য অর্থাৎ গুড়া দুধ বিক্রির সুযোগ থাকলেও তা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাইন্ডেশন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার খাদিজাতুল কুবরা বলেন, ‘শুধুমাত্র বিক্রি বা প্রদর্শনেই নিষেধাজ্ঞা নয়, গুড়া দুধ উৎপাদনকারী কোন কোম্পানি পণ্যের পরিচিতির জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, কোন চিকিৎসকও গুড়া দুধ খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিতে পারবে না। তারা কোন শিশুকে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প গুড় দুধ খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এমন প্রমাণ পেলে ওই চিকিৎসকের সনদ বাতিল হবে।
তবে বিশেষ কারণে, যেমন সন্তান জন্ম দিয়ে মা মারা গেলে সে ক্ষেত্রে শিশুকে গুড়া দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিতে পারবেন চিকিৎসকরা। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থাপত্রে গুড়া দুধ লেখার কারনও উল্লেখ করতে হবে। এটি শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবানকারী প্রতিষ্ঠান নয়, বেসরকারি ক্লিনিক বা প্রাইভেট চেম্বারের একই আইন প্রয়োগ করতে হবে। এর বাইরে স্টেশনারি দোকানে গুড়া দুধ বিক্রির সযোগ থাকলেও তা গোপনীয় ভাবে প্রদর্শন না করে বিক্রি করতে হবে।
খাদিজাতুল কুবরা বলেন, ‘আইন বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন কাজ করবে। তারই অংশ হিসেবে বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি ফার্মেসীতে অভিযান চালানো হয়েছে। এসময় দুটি ফার্মেসীকে জরিমানা করা হয়েছে। শুরু হওয়া এই অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।