স্বপ্নের পায়রা সেতুর টোল ফেরির চেয়ে বেশি, প্রথম দিনেই অসন্তোষ
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সাথে সাথে খুলে দেয়া হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পায়রা সেতু। তবে সেতুতে অতিরিক্ত হারে টোল নির্ধারণ করায় ক্ষুব্ধ যানবাহন ব্যবসায়ীরা।
এতে করে বাস ভাড়া থেকে শুরু করে মালবাহী ট্রাক এবং ভাড়ায়চালিত গাড়ির ভাড়া বেড়ে যাবে। পায়রা সেতুতে প্রথম টোল দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুজ। এরপর তিনি সেতু পার হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাস হয়ে রইলেন।
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে পায়রা সেতু। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর রক্ষার দায়িত্ব জনগণের। এরপর বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন উভয় দিক থেকে আসা-যাওয়া শুরু হয়। কিন্তু ফেরির চেয়ে ভাড়া বেশি হওয়ায় তারা সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বরিশাল নগরীর রূপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামিন হোসেন বলেন, সিদ্ধান্ত ছিল উদ্বোধনের পর ৪ ঘণ্টা টোল ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। কিন্তু ১২টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরুর পর টোল আদায় শুরু হয়।
তিনি বলেন, আগে একদিকের ফেরি ভাড়া ছিল ৭৫ টাকা করে। দুই প্রান্ত থেকে ১৫০ টাকা দিতে হতো। কিন্তু ব্রিজের টোল করা হয়েছে ৩৪০ টাকা। উভয় প্রান্ত থেকে দিতে হবে ৬৮০ টাকা। এটা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এজন্য ব্রিজ উদ্বোধনের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেয়া হলেও টোল কমানো হয়নি। বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর বর্তমান যাত্রী ভাড়া ৮০ টাকা। সেখানে আসা-যাওয়ায় টোল দিতে হবে ৬৮০ টাকা। তাহলে একজন ব্যবসায়ী কি ব্যবসা করবে। এমন অবস্থা হয়েছে বাসের ব্যবসা ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ওই ভাড়া দিয়ে ব্রিজ পার হয়ে কোনোভাবেই ব্যবসা করা যাবে না। তিনি টোল পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখা থেকে নির্ধারিত পায়রা সেতুতে সর্বোচ্চ ৯৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০ টাকা। কনটেইনারবাহী লরির ৯৪০ টাকা, ভারী ট্রাক ৭৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩৭৫ টাকা, বড় বাস ৩৪০ টাকা, ছোট ট্রাক ২৮০ টাকা, ট্রাক্টর ২২৫ টাকা, মিনিবাস ১৯০ টাকা, মাইক্রোবাস ১৫০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, প্রাইভেটকার ৯৫ টাকা, অটোরিকশা ৪০ টাকা, মোটরসাইকেল ২০ টাকা, রিকশা-ভ্যান-সাইকেল ও ঠেলাগাড়ি ১০ টাকা করে।
দুপুর ১২টায় সেতু পারাপারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর উৎসুক মানুষের চাপ পড়ে সেতুতে ওঠার জন্য। এতে করে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়। সাধারণ মানুষ ফোর লেন সেতুতে উঠে আনন্দ প্রকাশ করেন। তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ফেরি ছাড়া চলাচলের সে আশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি ও বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের এমপি পংকজ নাথ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
এই অঞ্চলের মানুষকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছেন। এর ফলে এই এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার আশা করেন তারা। একই সাথে আগামী নির্বাচনে এ অঞ্চলের মানুষ এর প্রতিদান দেবে বলেও তারা নিশ্চিত।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ চালু হল। এতে ফেরিঘাটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে জনগণ।
সেতুর নান্দনিকতায় পর্যটকও আকৃষ্ট হবে। দেশের একমাত্র সেতু পায়রায় নিজস্ব হেলথ মনিটরিং সিস্টেম রয়েছে। এর ফলে যে কোনো ধরনের দুর্যোগ-দুর্ঘটনার আগাম তথ্য পাবে সেতু কর্তৃপক্ষ।