বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বাড়বে বাসা ভাড়া-গণপরিবহন খরচ

রিপোর্টারের নাম / ১১৮ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

অন্যদিনগুলোর মতোই রাজধানীর বাড্ডা এলাকার চায়ের দোকানে আজও ছিল বেশ ভিড়। চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়া মানুষগুলোর আলোচনার বিষয় থাকে রাজনীতি, খেলাসহ সমসাময়িক বিষয়। কিন্তু আজ তাদের আলোচনায় ভিন্নতা এসেছে। চলছে হঠাৎ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ। কেননা আজ ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

বাড্ডার এক চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে আলোচনায় যুক্ত হন সাব্বির আহমেদ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গৃহস্থালির ক্ষেত্রে মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ১২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক চুলায় প্রতি মাসে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২৫ এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা। ফলে রাজধানীতে যারা ভাড়া বাসায় থাকি তাদের বাড়ি ভাড়া বাড়বে। এছাড়া যারা গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল একত্রে বাসা ভাড়ার সঙ্গে দেন অর্থাৎ যারা চুক্তিভিত্তিক বাসা ভাড়ায় থাকেন তাদের বাসা ভাড়া বাড়বে সবচেয়ে বেশি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাসা মালিকরা আরেক দফা বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা করবে। যে কারণে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির খড়্গ ভাড়াটিয়াদের ওপর পড়বে। তার এ যুক্তির সঙ্গে সম্মতি জানান অন্যরাও।

হাবিবুর রহমান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী গুলশানে অফিস করলেও থাকেন মিরপুরে।

তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ওপর। কারণ বাসা বাড়ির গ্যাসের চুলাপ্রতি চার্জ বাড়ানোর পাশাপাশি সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ টাকা। যে কারণে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া বেড়ে যাবে। আগে গুলশান থেকে মিরপুর ২০ টাকায় যেতাম, আজ বাসের হেলপার বলেছে গ্যাসের দাম বাড়লে ভাড়াও বেড়ে ২৫ টাকা হবে। তাহলে একদিকে বাসা ভাড়া বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে যাতায়াত খরচ। এসব জমা হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ঘাড়ে।

রোববার (৩০ জুন) বিকেলে ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বর্তমান ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গড় ৭ দশমিক ৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৮০ টাকা/ঘনমিটার নির্ধারণ করেছে কমিশন। গৃহস্থালির ক্ষেত্রে মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ১২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক চুলায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২৫ এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা। সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ টাকা এবং হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে ২৩ টাকা। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা এবং চা-বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সিএনজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। সিএনজি খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয়ের মধ্য দিয়ে শত শত কোটি কোটি লোপাট হচ্ছে। এ খাতে অবৈধ সংযোগ প্রদানকারী লাইনম্যান-পিয়ন থেকে শুরু করে এমডি পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ সর্বজনস্বীকৃত। এসব দুর্নীতিবাজের বিচার না করে, অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ না করে, আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, গণপরিবহনে ব্যবহৃত সিএনজি খাতে প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ৩ টাকা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভাড়া নৈরাজ্য আরেক দফা উস্কে দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যানবাহনের ভাড়া বেড়ে যাবে উল্লেখ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু জাগো নিউজকে বলেন, সিএনজি অটোরিকশা বা গণপরিবহনের মালিকরা বেশি দামে গ্যাস কিনে কম ভাড়ায় নিশ্চই যাত্রীকে গন্তব্য পৌঁছে দেবে না। বেশি দামে গ্যাস কিনতে হলে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেব। গ্যাসের দাম বাড়লে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে বলে জানান তিনি।

মিরপুরের বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল থাকেন ভাড়া বাসায়। তিনি বলেন, প্রতি মাসের বেতনের সিংহভাগই যায় বাসা ভাড়ায়। এরপর আছে সংসার খরচ, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ। সব মিলিয়ে খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রাজধানীতে বসবাস করতে হয় নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের। কিছুদিন আগে বাজেট ঘোষণার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ওপর আজ গ্যাসের দাম বাড়লো। এতে আরেক দফা বাড়বে বাসা ভাড়া। শুধু তাই নয়, গণপরিবহনে যাতায়াত খরচও বাড়বে। সব কিছুর দাম এভাবে বাড়লে সাধারণ মানুষ আমরা যাবো কোথায়?

মিরপুর শেওড়াপাড়ার এক বাসার মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে প্রতি বছর অনেক বাড়ির মালিক বাসা ভাড়া বাড়ায়। আজ গ্যাসের দাম বেড়েছে এখানে তো আমাদের (বাড়ি মালিকদের) হাত নেই। সরকার বাড়িয়েছে যে কারণে আমরাও ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে আদায় করবো, আমরা নিজেরা তো আর ভুর্তকি দিতে যাবো না। ভাড়াটিয়াদের এ টাকা দিতে হবে। আমরা বাৎসরিক বাসা ভাড়া বাড়াবো আগামী জানুয়ারিতে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার সব কিছুর ওপর প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রথমে বাড়বে বাসা ভাড়া। এরপর গণপরিবহন মালিক শ্রমিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেবে। ফলে প্রভাব পড়বে সাধারণ নাগরিকের ওপর। চায়ের দোকানে চায়ের দাম বাড়বে, রেস্টুরেন্টে খেতেও খরচ বাড়বে। আসলে গ্যাসের দাম বাড়লে সব কিছুর ওপর প্রভাব পড়বে।

রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা চালক খুরশেদ আলম বলেন, গ্যাসের দাম বেড়েছে, এখন থেকে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস কিনতে বেশি টাকা লাগবে। এদিকে আমাদের গাড়ির জমা-খরচ, লাইন খরচ, রাস্তা খরচ তো আছেই। যে কারণে যাত্রীদের কাছেও ভাড়া বেশি নিতে হবে। আগে গুলশান থেকে শাহবাগ যেতে ভাড়া নিতাম ২০০ টাকা এখন তা বড়িয়ে ২৫০ টাকার মতো নেবে সিএনজি চালকরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর