১০ বছর পর সেই ‘১৯ জানুয়ারি’ কাঁদার বদলে হাসলেন মাশরাফি!
২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি, ১০ বছর আগে ঠিক আজকের দিনটিতেই অঝোরে কেঁদেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মনের গহীনে সযত্নে পুষে রাখা স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গিয়েছিল সেদিন। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার আশা ছিল। ঠিক ওই দিনটিতে আশা ভঙ্গের বেদনায় ‘নীল’ হয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
কি আশ্চর্য্য ১০ বছর পর ঠিক সেই দিনেই তার জাতীয় প্রিয় দলকে শুভ কামনা মাশরাফি বিন মর্তুজার। নিজের ফেসবুক স্ট্যটাসে তামিম বাহিনীকে শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানিয়ে লিখলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে প্রিয় ক্রিকেট দল কাল মাঠে নামছে। পুরো দলের প্রতি রইলো শুভকামনা। “তামিম ইকবাল খান”এর জন্য রইলো স্পেশাল ভালোবাসা এবং দোয়া। সকল চাপকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সবসময়ের মতো বিজয়ী হয়ে আসবে এই দোয়াই করছি। নতুন শুরুর জন্য শুভকামনা। আওয়াজ একটাই -(বাংলাদেশ)।’
সময়ের পার্থক্য ১০ বছর। অবাক করা সত্য হলো প্রেক্ষাপটের কি অদ্ভুত মিল! ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি সুস্থ্য থেকেও বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়ার যন্ত্রনায় কেঁদেছিলেন। সে দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা আর বেদনা প্রকাশ্যেই প্রকাশ করেছিলেন মাশরাফি।
কিন্তু এবার ১০ বছর পর সম্পূর্ণ সুস্থ ও পুরোপুরি ফিট মাশরাফি দলের বাইরে থেকে আর প্রকাশ্যে কাঁদতে পারলেন না। কেউ দেখেনি তার চোখের জল।
কিন্তু কেউ কি হলপ করে বলতে পারবেন মাশরাফির মন একটুও খারাপ হয়নি! ভিতরে কোনোই দুঃখবোধ নেই। প্রচন্ড সাহসী আর বীর ক্রিকেট সেনাপতির মন একটুও কাঁদেনি? তার একটুও খারাপ লাগেনি?
নিশ্চয়ই লেগেছে; কিন্তু ওই যে বলা হলো, এবার আর প্রকাশ্যে ভাবাবেগ প্রকাশ করেননি নড়াইল এক্সপ্রেস। সেই পরিবেশ-প্রেক্ষাপটও নেই।
এখন তাই আর প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলা সম্ভব হচ্ছে না; কিন্তু ভিতরে নিশ্চয়ই রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা, সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক ও পেসারের।
আজই মাশরাফিকে ছাড়া আবার মাঠে নামার শেষ অনুশীলন করলো টিম বাংলাদেশ। রাত পোহালে ২০ জানুয়ারি বুধবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মাঠে নামবে টিম বাংলাদেশ। কিন্তু সে দলে নেই মাশরাফি।
সেই ২০ বছর আগে (২০০১ সালের ২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
সে ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হারলেও ওয়ানডে অভিষেকে মাশরাফির বোলিং সবার নজর কেড়েছিল। মাত্র ১৫৬ রানের মামুলি পুঁজি নিয়েও বল হাতে ইনিংস ওপেন করে ৮.৩ ওভার বোলিং করে ৩ মেডেন সহ ২৬ রানে দুই উইকেট দখল করেছিলেন তখনকার ১৮ বছরের উদ্যমী যুবা মাশরাফি বিন মর্তুজা কৌশিক।
জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের দুই অন্যতম সেরা ও সফল উইলোবাজ গ্র্যান্ট ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে ফিরিয়ে আশার সঞ্চার করেছিলেন মাশরাফি। গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ারের উইকেট উপড়ে গিয়েছিল মাশরাফির এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে।
সেই তো শুরু, এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তরতরিয়ে ওপরে উঠেছেন। কাকতালীয়ভাবে জীবনের শেষ ওয়ানডে সিরিজটিও খেলেছেন সেই জিম্বাবুয়েরই বিপক্ষে। তার অধিনায়কত্বে গতবছর মার্চে সিলেটে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ‘বাংলাওয়াশ’ করে ছাড়ে টিম বাংলাদেশ।
১০ মাস পর আবার ওয়ানডে সিরিজ টাইগারদের। এবার আর নেই মাশরাফি। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইনজুরি তাকে বারবার ভুগিয়েছে। হাঁটু-গোড়ালির ইনজুরির কারণে ছোট-বড় মিলে ছয়-সাতবার অপারেশনের টেবিলে যেতে হয়েছে।
প্রতিবার ইনজুরিকে জয় করে ফিরে এসেছেন মাঠে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে গোড়ালির ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন।
২০০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার শেরে বাংলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলার ১৩ মাস পর আবার মাঠে ফিরে আসেন ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)। ২০০৯ সালে ১৩টি আর ২০১০ সালে ৭টিসহ মোট ২০ ম্যাচ খেলতে পারেননি ইনজুরিতে।
এরপর ২০১১ সালের এপ্রিলে আবার ইনজুরির শিকার হলেন। সে বছর ১৩ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলার পর ১১ মাস বাইরে। আবার ২০১২ সালের ১১ মার্চ এশিয়া কাপে আবার জাতীয় দলের লাল সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামেন মাশরাফি। ১১ মার্চ ভারতের সাথে ফেরার আগে জাতীয় দলের হয়ে ১১ ম্যাচ বাইরে থাকা।
মোটকথা ইনজুরি ছাড়া সুস্থ মাশরাফি পুরো ২০ বছরের ক্যারিয়ারে ফর্মের কারণে একবারও বাদ পড়তে হয়নি। বাদই পড়েছেন দু’বার। প্রথমবার ২০১১’র বিশ্বকাপে ফিটনেসের অজুহাতে তাকে বাদ দেয়া হয়। বলা হয়েছে তখন তিনি শতভাগ ফিট ছিলেন না।
তখনকার প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলমের চোখে মাশরাফির সে সময় ছিল ম্যাচ ফিটনেসের অভাব। আর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে মাশরাফিকে বিবেচনায় আনা হয়নি ভবিষ্যত লক্ষ্য-পরিকল্পনার ধুয়া তুলে। কোচ ও বিসিবির ভবিষ্যত পরিকল্পনায় নেই, তাই ৩৬ প্লাস মাশরাফিকে বাইরে রেখেই সাজানো হয়েছে দল।
এবারও কিন্তু তার ফর্ম নেই, ফিটনেসের অভাব- একথা বলা হয়নি। কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো আর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কেউ একবারের জন্য বলেননি, বলতে পারেনি সে কথা।
তারপরও নির্মম সত্য, মাশরাফি নেই এবার। আর কখনো থাকবেন কী?