প্রত্যাশিত জয়েই শুরু বাংলাদেশের
প্রথম ইনিংসের পরই মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের ফলাফল। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে ১২২ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সহজ লক্ষ্যে জয় যতটা সহজে আসার কথা ছিল, ঠিক ততটা সহজে পায়নি বাংলাদেশ। মাত্র ১২৩ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, খেলেছে ৩৩.৫ ওভার।
কাগজে-কলমে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়টা প্রত্যাশিত ছিল। ৬ উইকেটের জয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাটা রাঙিয়ে রাখল বাংলাদেশ। একইসঙ্গে নতুন বছরের শুরুটাও ইতিবাচকভাবেই করলো তামিম ইকবালের দল।
তার চেয়ে বড় স্বস্তি সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। দীর্ঘদিন পর মাঠে ফেরা সাকিব ছিলেন সবার চেয়ে উজ্জ্বল। প্রথম বল হাতে মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেটের পর ব্যাট হাতে করেছেন ১৯ রান। যা দলকে সহজ জয় এনে দিতে সাহায্য করেছে।
অথচ ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে সোজা ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ-অধিনায়ক সুনিল অ্যামব্রিস। এমন শট দিচ্ছিল সাহসী ব্যাটিংয়ের বার্তা। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমানের করা দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই থেমে যায় অ্যামব্রিসের যাত্রা। ফিরতে হয় সাজঘরে।
খালি চোখে মনে হচ্ছিল, মোস্তাফিজের উইকেট নেয়া ডেলিভারিটি পিচ করেছে লেগস্ট্যাম্পের বাইরে। তবে রিপ্লেতে দেখা গেছে, মিডল স্ট্যাম্পেই ছিল সেই বল, যা আঘাত হানত মিডল-লেগ স্ট্যাম্পে। ফলে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি অ্যামব্রিস। নিজের মাত্র দ্বিতীয় বলেই প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন মোস্তাফিজ। যা ছিল মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতনের শুরু।
দ্বিতীয় উইকেটও আসে মোস্তাফিজের বোলিংয়ে। এবার গালিতে দাঁড়িয়ে উড়ন্ত ক্যাচ নেন লিটন দাস। মোস্তাফিজের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিটিতে ড্রাইভ করেছিলেন জশুয়া ডা সিলভা। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় গালি অঞ্চলে। যেখানে ছিলেন লিটন, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুই হাতে বলটি তালুবন্দী করে বাজান জশুয়ার বিদায়ঘণ্টা।
এরপর শুরু হয় বল হাতে সাকিবের ক্যালমা। আইসিসির এক বছরের নিষেষাজ্ঞা ও করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘ ১৬ মাস পর খেলতে নেমে প্রায় একা হাতেই ক্যারিবীয়দের গুঁড়িয়ে দেন সাকিব। নিজের প্রথম ওভারে অন্তত তিনবার ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কানায় বল লাগান সাকিব, সম্ভাবনা জাগান উইকেটের।
প্রথম ওভারে উইকেট না পেলেও, পরে সাকিবের ঘূর্ণিতেই কুপোকাত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভার বল করেছেন তিনি। ক্যারিবীয় ইনিংসের ২৩তম ওভারে যখন আক্রমণ থেকে সরানো হয় সাকিবকে, তখন তার নামের পাশে বোলিং ফিগার ৭-২-৮-৩; এই স্পেলে ৩৪টি বলই ছিল ডট।
পরে সাকিবের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তিন উইকেট নেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ, মেহেদি হাসান মিরাজের ঝুলিতে যায় এক উইকেট। ততক্ষণে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের গুটিয়ে দিতে ৩৩তম ওভারে ফের আনা হয় সাকিবকে। দ্বিতীয় বলেই তিনি তুলে নেন ক্যারিবীয়দের শেষ উইকেট। সবমিলিয়ে বোলিং ফিগার দাঁড়ায়ঃ ৭.২-২-৮-৪! ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুঁড়িয়ে যায় মাত্র ১২২ রানে।
ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে তেমন বড় সংগ্রহ দিতে না পারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা ঠিকই নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। অভিজ্ঞতার বিচারে বাংলাদেশ থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বল হাতে ঠিকই টাইগার কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন ক্যারিবীয় বোলাররা। যেখানে বেশ কষ্টেই পাস করতে হয়েছে তামিম ইকবাল, লিটন দাসদের।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের শুরু থেকে টানা ৮ ওভার বোলিং করেন তরুণ পেসার আলঝারি জোসেফ। যেখানে প্রথম ৬ ওভার শেষে তার বোলিং ফিগার ছিল ৬-৩-৭-০। টানা মাপা লাইন-লেন্থে বোলিং করে লিটন-তামিমের নাভিশ্বাস উঠিয়েছেন আলঝারি। একেকটি রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে দুই ওপেনারের। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৭ রান করতে শেষ হয় ১৩.২ ওভার।
ইনিংসের ১৪তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন লিটন। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনের শার্প টার্নে বোকা বনে যান ৩৮ বলে ১৪ রান করা লিটন। এরপর নিজের দশ ওভারের স্পেলের একদম শেষ বলে সাকিবকেও সরাসরি বোল্ড করেন আকিল হোসেন। তার ১০ ওভারের বোলিং ফিগার ছিল এক মেইডেনে ২৬ রানে ৩ উইকেট। মাঝে নাজমুল হোসেন শান্তকেও ফিরিয়েছিলেন আকিল। শান্ত করেন ১ রান।
শান্ত, লিটনরা অল্পে ফিরলেও অধিনায়ক তামিম ইকবাল রয়েসয়ে খেলে এগোচ্ছিলেন ব্যক্তিগত ফিফটির দিকে। কিন্তু ৪৪ রানের মাথায় ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের বলে স্ট্যাম্পিং হন টাইগার অধিনায়ক। তখনও জয় থেকে ৪০ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ। পরে দলীয় ১০৫ রানে ফিরে যান সাকিবও। ছোট লক্ষ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে খানিক বিপাকেই পড়ে বাংলাদেশ।
তবে পঞ্চম উইকেটে আর বিপদ ঘটতে দেননি দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে দেখেশুনে খেলেই শেষ করেন ম্যাচ। রিভার্স সুইপে চার মেরে ম্যাচ শেষ করেন ১৯ রানের ইনিংস খেলা মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৯ রানে।